আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল বেড়েছে স্বর্ণের দাম। তবে লেনদেনের পরিমাণ ছিল সীমিত। বাজার সম্পর্কে আরো পরিষ্কার ধারণা পেতে বিনিয়োগকারীরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ডাটা ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) আর্থিক নীতিসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। খবর রয়টার্স।
স্পট মার্কেটে গতকাল স্বর্ণের দাম দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৩ ডলার ৯৮ সেন্টে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার মার্কেটে মূল্যবান ধাতুটির দাম দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। আউন্সপ্রতি মূল্য উঠেছে ২ হাজার ৪৫ ডলার ৭০ সেন্টে।
৪ ডিসেম্বর ধাতুটির দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ আউন্সপ্রতি ২ হাজার ১১১ ডলার ৩৯ সেন্টে উঠেছিল।
অ্যাক্টিভ ট্রেডসের সিনিয়র বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভাঞ্জেলিস্তা বলেছেন, ‘যদি চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য দৃষ্টিভঙ্গিটিকে শক্তিশালী করে যে ফেড শিগগিরই সুদহার কমাতে শুরু করবে, তাহলে স্বর্ণের দাম বাড়বে। তা না হলে ফেডের উচ্চ সুদহার নীতি আরো বেশি সময় বহাল রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্রোকারেজ ফার্মটির এ বিশ্লেষক বলেন, ‘আগামীতে আমরা দেখতে পাব শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নানা বিধিনিষেধ ও উচ্চ সুদহার কমাতে শুরু করবে। তাই ২০২৪ সাল স্বর্ণের জন্য একটি ইতিবাচক বছর হতে যাচ্ছে।’
বাজার প্রবণতা অনুযায়ী, ব্যাংক আমানতে উচ্চ সুদহার না থাকলে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের বাজারে ঝুঁকতে শুরু করেন, যার প্রভাবে ধাতুটির দাম বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলার মূল্য হারাচ্ছে। যদিও গতকাল মার্কিন মুদ্রাটির বিনিময় হার ছিল অপরিবর্তিত। ডলারের বিনিময় হার কমে গেলে ভিন্ন মুদ্রার গ্রাহকের জন্য স্বর্ণ ক্রয় খরচ কমে যায়। এতে বিক্রি বেড়ে যায় ধাতুটি। পাশাপাশি ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার গত পাঁচ মাসের সর্বনিম্নে অবস্থান করার ফলেও স্বর্ণের বাজারমুখী হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি বিক্রির হার অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। আর শ্রমবাজার চাঙ্গা হওয়ায় ডিসেম্বরে ভোক্তা আস্থাও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রান্তিকের জিডিপি রিপোর্ট, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাপ্তাহিক বেকারত্বের তথ্য এবং শুক্রবার পর্যন্ত ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় (পিসিই) রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ফেড কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে নতুন বছরে সুদহার কমানোর ইঙ্গিত পেয়েছেন বিশ্লেষকরা। যদিও কিছু কর্মকর্তা শিগগিরই সুদহার কমানোর পক্ষে নন। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা সিএমই ফেডওয়াচ টুল জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীরা ২০২৪ সালের মার্চে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা দেখছেন ৮০ শতাংশ।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আগামী বছর সুদহার আরো কমানো হতে পারে, ফেডের এমন ইঙ্গিতে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের বাজারে ঝুঁকছেন। আমরা মনে করি, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ২৫০ ডলার ছোঁবে।’
এদিকে স্পট মার্কেটে গতকাল রুপার দাম দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। আউন্সপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ২৪ ডলার ২০ সেন্টে। তবে কমেছে প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দাম। আউন্সপ্রতি দশমিক ২ শতাংশ কমে প্লাটিনামের দর নেমেছে ৯৫৫ ডলার ২৩ সেন্টে। আর প্যালাডিয়ামের দাম কমেছে দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতি আউন্স লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৯২ ডলার ৩৪ সেন্টে।