সম্মেলনে আসকের নির্বাহী পরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন সংবাদকর্মী। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বাংলা নিউজ২৪.কম জামালপুর প্রতিনিধি ও ৭১ টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক লাঞ্ছিত ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাধা প্রদানের শিকার হয়েছেন ২২ জন সাংবাদিক
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করায় ইতোমধ্যে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং অংশগ্রহণমূলকতা নিয়ে দেশে বিদেশে নানা প্রশ্ন ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৩ সালের বার্ষিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছরেও শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশে বাধা দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গায়েবি মামলা, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত আচরণ, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করার অভিযোগ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
১৩ নভেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) এর আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচিত হয়েছে এবং উপরে উল্লেখিত মানবাধিকার ইস্যুগুলো নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য দেশ বাংলাদেশকে প্রায় ৩০০ সুপারিশ করেছে।
পর্যালোচনার পরপর ১৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে অফিস অব দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে।
তিনি বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে- জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যায্য মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মীদের আন্দোলনেও চলছে দমনপীড়ন। এ ছাড়া সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের নেতাদের বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিক্ষোভ-আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া পরিবারের সদস্যদের হয়রানি, ভয় দেখানো এবং বেআইনিভাবে আটক রাখার অভিযোগ সামনে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে এ বছর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা ছিল। বিদ্যমান আইন ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অন্যতম উদাহরণ এটি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সরকার ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এসব অভিযোগকে দেশি-বিদেশি প্রচারণার অংশ হিসেবে উল্লেখ করে নানা ধরনের দুঃখজনক মন্তব্য করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অনেক সময় বলা হয়, বাহিনীতে কর্মরত যে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন হলে তা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হয়। এ ধরনের বিষয়ে যদি যথাযথ তদন্ত করা হয় তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে কিংবা ইতোপূর্বে নিয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য কিন্তু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। নিজ বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজ বাহিনী তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য কিংবা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে না। কাজেই প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা আবশ্যক।
অন্যদিকে এ সময়কালে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় বাবা মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর ও গাজীপুর জেলায়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টত বলা আছে, বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না, কিংবা নিষ্ঠুর অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনারও ব্যত্যয় ঘটেছে। উল্লেখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কিংবা সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার কারণে যারা আটক বা গ্রেফতার হচ্ছেন, তাদের প্রতি এ ধরনের আচরণ শিষ্টাচার বহির্ভূত; একইসঙ্গে মানবাধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থি।
এমআই