সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্যতেলের ওপর শুধু আমদানি পর্যায়েই ভ্যাট নেওয়ার জন্য আবেদন দিয়েছিল ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু আমদানি পর্যায়েই প্রস্তাবিত ভ্যাট নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। সুপারিশটি এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আছে।
ট্যারিফ কমিশনে দেওয়া আবেদনে সংগঠনটি জানায়, বর্তমানে ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন, পাম ও পাম অলিন তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি), উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বিক্রয় ও সরবরাহ পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে। আমদানি পর্যায়ে প্রতি টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক গড় মূল্য ৬৫০ ডলার। ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে প্রতি টনের গড় দাম ৫৫ হাজার ২৫০ টাকা। এর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ হিসাবে প্রতি টনে আট হাজার ২৯০ টাকা, উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি টনে আট হাজার টাকা মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এক হাজার ২০০ টাকা ও বিক্রয় মূল্যে ৯০ হাজার টাকার ওপর ৫ শতাংশ হিসাবে চার হাজার ৫০০ টাকা পড়ে। এ হিসাবে প্রতি টনে তিন পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হয় ১৩ হাজার ৯৯০ টাকা।
উৎপাদনকারী কোম্পানির ব্যবসায়ীরা জানান, ডিলারদের হয়রানি বন্ধে আগের মতো সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি পর্যায়ে প্রতি টনে ট্যারিফ ভ্যাট ১৫ হাজার টাকা দিতে চান তারা। তিন স্তরে ভ্যাট দিলেও সরকার পাচ্ছে প্রতি টনে ১৩ হাজার ৯৯০ টাকা। আমদানি পর্যায়ে একসঙ্গে টনপ্রতি এক হাজার টাকা বাড়তি ভ্যাট দিয়েও সরবরাহ পর্যায়ে হয়রানি বন্ধ চান ব্যবসায়ীরা। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত এক স্তরে ভ্যাট থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম ও সরবরাহ অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। তাই ব্যবসায়ীরা এক স্তরেই ভ্যাট পরিশোধ করতে চান।
১৫ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দেওয়া এক সুপারিশে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানায়, সম্প্রতি বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ট্যারিফ কমিশনে এক বৈঠক হয়েছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপরিশোধিত সয়াবিন, পাম ও পাম অলিন আমদানি, উৎপাদন ও খুচরা ব্যবসায়ী এই তিন পর্যায়ের পরিবর্তে শুধু আমদানি পর্যায়েই ভোজ্যতেলের ভ্যাট নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর আগে গত জুন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো এক সুপারিশে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানায়, ভোজ্যতেলের ভ্যাট তিন পর্যায়ের পরিবর্তে শুধু আমদানি পর্যায়ে প্রতি টনে ১৬ হাজার টাকা নেওয়া যেতে পারে। এতে বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ভোজ্যতেলে বিদ্যমান ভ্যাট আহরণ পদ্ধতিতে মূল্য স্থিতিশীল রাখা কঠিন। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের মূল্য প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এর ফলে বর্তমান পদ্ধতিতে এ পণ্যের ভ্যাটের পরিমাণও পরিবর্তন হয়। তাছাড়া সরবরাহ ও খুচরা ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট সমন্বয় করা অত্যন্ত কঠিন। এই পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ না করায় মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট না দিয়ে রেয়াতি হার ৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছে, যা মূল্য সংযোজনের চেয়ে অনেক বেশি। এতে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরবরাহ পর্যায়ে থাকা ব্যবসায়ীরা পণ্য নিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
দেশে প্রতি বছর গড়ে আট লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন ও ১২ লাখ টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত পাম তেল আমদানি হয়। অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ৩০ শতাংশ বোতল ও প্যাকেটজাত এবং ৭০ শতাংশ খোলা বিক্রি হয়। পাম তেল ও পাম অলিনের ১০ শতাংশ বোতল ও প্যাকেটজাত এবং ৯০ শতাংশ খোলা বিক্রি হয়।
আমদানি করা এই তেলের গত কয়েক বছরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন আন্তর্জাতিক বাজারদর ভিত্তি ধরে বিদ্যমান ভ্যাট কাঠামোতে রাজস্বের পরিমাণ এবং আবেদনকারী সংগঠনের প্রস্তাব অনুযায়ী রাজস্বের পরিমাণ বিশ্নেষণ করেছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির বিশ্নেষণে দেখা যায়, প্রতি টন অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ভ্যাট ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলে সরকারের রাজস্বের পরিমাণ বাড়বে।