জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরও ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের উদীয়মান প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোয় এসব মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একাধিক বিনিয়োগকারী এবং প্রযুক্তি খাতের পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে ইটি টেলিকম।
বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারী প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোর কার্যক্রমে গতি এনেছে। স্টার্টআপগুলোর জন্য ব্যবসা সম্প্রসারণের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। চলমান মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে ঘরবন্দি হয়ে পড়া মানুষ অফিসের কার্যক্রম পরিচালনায় পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ে। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বাসায় থেকে কাজের সুবিধা দিচ্ছে। রিমোট ওয়ার্ক সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে দেখা দিয়েছে নতুন প্রযুক্তি সেবার প্রয়োজনীয়তা। এক্ষেত্রে বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উদীয়মান স্টার্টআপগুলোর জন্য ব্যবসা বিস্তৃত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ভেঞ্চার ক্যাটালিস্টস স্টার্টআপ ইনকিউবেটরের সহপ্রতিষ্ঠাতা অপূর্ব রঞ্জন শর্মা বলেন, ২০২০ সাল বিশ্বের অনেক দেশের প্রযুক্তি স্টার্টআপের পাশাপাশি ভারতীয় স্টার্টআপগুলোর জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভারতীয় প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলো বিভিন্ন মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। ৫০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দেশ ভারত। আগামী মাসগুলোয় ভারতের স্টার্টআপে মার্কিন বিনিয়োগে উল্লম্ফন ঘটবে। ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা খাত বিশ্বের জন্য রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে।
চলমান কভিড-১৯ মহামারীর নতুন বাস্তবতার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রযুক্তি শিল্প খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। অনেকে সূক্ষ্ম নজর রেখেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইলেক্টোরাল ভোট জো বাইডেনের ঝুলিতে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০ জানুয়ারি ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডেমোক্র্যাট বাইডেন। নতুন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। অনেকের ধারণা, ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে হোয়াইট হাউজ। অবশ্য নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরুতে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ প্রাপ্তির নীতিমালা পরিবর্তন করেছে, যা দেশটির স্টার্টআপগুলোয় বিনিয়োগ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত-চীনের সীমান্ত বিরোধের জেরে পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে। চীন ভারতীয় স্টার্টআপগুলোর বৃহৎ বিনিয়োগকারী ছিল। অন্যদিকে বাণিজ্য বিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টানা কয়েক বছর ধরে খারাপ সম্পর্ক বিদ্যমান। এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় স্টার্টআপগুলো বেশি মার্কিন বিনিয়োগ পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।
ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির টেলিযোগাযোগ কোম্পানি রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের প্রায় ১০ শতাংশ মালিকানা কিনেছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক। এ অধিগ্রহণ চুক্তির মূল্য ৫৭০ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৩ হাজার ৫৭৪ কোটি রুপি। গত এপ্রিলে মার্ক জাকারবার্গ নিয়ন্ত্রিত ফেসবুকের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফেসবুকের দাবি, বিশ্বজুড়ে নিজেদের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি করতেই জিওর সঙ্গে তাদের এ জোটবদ্ধ হওয়া।
মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (আরআইএল) আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান হলো জিও প্লাটফর্ম। রিলায়েন্সের ডিজিটাল সেবা প্রদান করছে এ প্রতিষ্ঠান। আর জিও প্লাটফর্মের আওতাধীন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি হলো রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেড। ভারতে কার্যক্রম শুরুর খুব অল্প সময়ে সেলফোন অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা ৩৮ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড়, সাশ্রয়ী ও দ্রুত প্রবৃদ্ধির টেলিকম বাজার। তবে দেশটির টেলিকম খাত টানা কয়েক বছর নজরকাড়া সব অর্জনের পর এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংকটপূর্ণ সময় পার করছে, যা একটি বাজারের সমগ্র চিত্র বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় স্টার্টআপগুলোতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
অর্থসংবাদ/এসআর