অ্যাপলের দাবি, শিক্ষার্থী কর্মীদের ভুলভাবে শ্রেণীভুক্ত করেছে পেগাট্রন এবং নীতিমালা অমান্য করার বিষয়টি আড়াল করতে মিথ্যা নথি তৈরি করেছে। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মূল পাঠ্যবিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কাজও তাদের দিয়ে করানো হয়েছে। যে কারণে পেগাট্রনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ নীতিমালায় কার্যকর পরিবর্তন না আনা পর্যন্ত অ্যাপলের কাছ থেকে নতুন কোনো ব্যবসায় চুক্তিতে যেতে পারবে না পেগাট্রন।
অ্যাপল পণ্য সরবরাহকারীদের সিংহভাগই তাইওয়ানভিত্তিক। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো চীনে স্থাপিত কারখানায় আইফোনসহ অন্যান্য অ্যাপল পণ্য সংযোজন ও উৎপাদনের কাজ করে আসছে। অ্যাপলের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক পণ্য সরবরাহকারী ফক্সকন। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে পেগাট্রন করপোরেশন।
অ্যাপলের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা কয়েক সপ্তাহ আগে জানতে পারে চীনে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পেগাট্রন শিক্ষার্থীদের কাজে অংশ নেয়ার প্রকল্পে অ্যাপলের ‘কোড অব কনডাক্ট’ অমান্য করেছে। শিক্ষার্থীদের রাতের শিফটে কাজ করানো এবং ওভারটাইম করানোর মতো তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তবে পেগাট্রনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোনো কাজ করানো কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের দ্বারা কাজ করানোর প্রমাণ মেলেনি।
শিক্ষার্থী শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অ্যাপল ব্যবস্থা নেয়ার তথ্য প্রকাশের পর পেগাট্রন ‘শিক্ষার্থী ওয়ার্কার’ প্রকল্পের প্রধানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এছাড়া পেগাট্রনে কর্মরত শিক্ষার্থীদের যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। বলা হচ্ছে, অ্যাপলের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম ফাঁকি দিতে পেগাট্রন শিক্ষার্থী ওয়ার্কার প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়েছে।
অ্যাপলের অভিযোগ এবং গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি পেগাট্রন। তবে প্রতিষ্ঠানটি কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এছাড়া অ্যাপলের কোড অব কনডাক্ট লঙ্ঘন করে এমন প্রকল্পগুলো থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপল পণ্য উৎপাদন লাইন থেকে পেগাট্রনকে সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে এর আগেও অভিযোগ উঠেছে অ্যাপল এবং প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে, যা অ্যাপলের পক্ষ থেকে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারখানা কর্মপরিবেশ ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অ্যাপল।
গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত চীনের মানবাধিকার সংস্থা ‘চায়না লেবার ওয়াচ’র (সিএলডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল এবং অ্যাপল পণ্য সরবরাহকারী ফক্সকন চীনের শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে। অনুমোদিত হারের চেয়ে অনেক বেশি অস্থায়ী কর্মী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে চড়া দামের আইফোন। চীনের শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিক নিয়োগ এবং বৈষম্যের অভিযোগ স্বীকারও করেছে অ্যাপল ও ফক্সকন।
তাইওয়ানভিত্তিক ফক্সকন অ্যাপলের প্রধান পণ্য সরবরাহকারী। চীনে স্থাপিত কারখানায় আইফোনসহ অন্যান্য অ্যাপল পণ্য তৈরির কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপলের এ সংযোজন অংশীদার চীনা আইনে অনুমোদিত হারের চেয়ে বেশি অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ দিয়ে আসছে। একই সময় অভিযোগ করা হয়, বিশ্বের বৃহৎ আইফোন কারখানার কাজের পরিবেশেরও ন্যূনতম মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ফক্সকন।
সিএলডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, ফক্সকনের ঝেংঝু কারখানায় গোপন অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরিবেশের তথ্য উদঘাটন করা হয়। ওই কারখানায় তাদের প্রতিনিধি কর্মী সেজে কাজ করেছেন, এর মধ্যে একজন কাজ করেছেন দীর্ঘ চার বছর। ২০১৮ সালে ফক্সকনের কারখানায় অস্থায়ী কর্মী ছিল ৫৫ শতাংশ, যা গত বছর আগস্টে বেড়ে ৫৫ শতাংশে পৌঁছায়। মজার বিষয় হলো—এসব অস্থায়ী কর্মীর সিংহভাগই ছিল শিক্ষার্থী। গত বছর আগস্টের পর শিক্ষার্থীরা ফক্সকন কারখানা ছাড়লে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৩০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসে, যা চীনা শ্রম আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি জানায় সিএলডব্লিউ।
অর্থসংবাদ/এসএ