পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রীর অনুমোদন পেলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন করা হবে।
প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগের প্যামস্টেক উইং। এ উইংয়ের যুগ্ম-প্রধান মো. আব্দুর রউফ জানান, বিভাগের সদস্যের অনুমতি ছাড়া তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ ওই সময় করোনায় আক্রান্ত থাকায় (বর্তমানে তিনি করোনামুক্ত কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ নন) তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।
প্রেক্ষাপট টেনে প্রকল্পের যৌক্তিকতায় ইসি বলছে, সুষ্ঠু নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ও গণতান্ত্রিক ধারা এগিয়ে নিতে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা ও তথ্যভাণ্ডার অপরিহার্য। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা/দেশের সহায়তায় ‘ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে সহায়তা প্রদান প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নিবন্ধিত ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করা হয়।
বর্তমানে এ তথ্যভাণ্ডার বা ডাটাবেজ নাগরিক শনাক্তকরণে স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করছে। অপর একটি প্রকল্প ‘উপজেলা সার্ভার স্টেশন ফর ইলেক্টোরাল ডাটাবেজ’র মাধ্যমে উপজেলা/থানা, জেলা, আঞ্চলিক পর্যায়ে সার্ভার স্টেশন কাম নির্বাচন কার্যালয় স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া উল্লিখিত তথ্যভাণ্ডারে রক্ষিত নাগরিকদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, পরিচয়পত্রের যথার্থতা যাচাইকরণ ব্যবস্থা প্রচলন এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচিতি যাচাই সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলোর আইটি অবকাঠামো প্রস্তুতের লক্ষ্যে ইসি ২০১১ সালে সরকারের অনুদান ও বিশ্ব ব্যাংকের ঋণে ‘আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) তৃতীয় সংশোধন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদান, পরিচিতি সেবার সুষ্ঠু বিকেন্দ্রীকরণ, ওয়ানস্টপ পরিচিতি সেবা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ইসি সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় ও মাঠ কার্যালয়ের প্রয়োজনীয় জনবলের সঙ্কট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের জনবল ছাড়া নাগরিকদের পরিচিতি সেবা প্রদান বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। ভোটার তালিকা ও পরিচয়পত্রের জন্য একই ডাটাবেজ থাকায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে পরিচিতি সেবা প্রদান বন্ধ রাখতে হয়, যা নাগরিক সেবা প্রদানে দেরি করায়। একই ডাটাবেজ থেকে পরিচিতি যাচাই সেবা, ভোটার তালিকা প্রস্তুত, জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রণ, পরিচয়পত্র সংশোধনসহ নানাবিধ কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয় বিধায় সেবার মান কাঙ্ক্ষিত স্তরে উন্নীত করা সম্ভব হয় না।
এ প্রেক্ষাপটে ভোটার তালিকা ও পরিচিতি সেবার জন্য পৃথক ডাটা সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন, ডিজাস্টার রিকভারি সাইট স্থাপন ও সিনক্রোনাইজেশন, ডিসি/ডিআরএস রক্ষণাবেক্ষণ এবং আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় চলমান জাতীয় পরিচিতি সেবা, পরিচিতি যাচাই সেবা, স্মার্ট পরিচয়পত্র উৎপাদন ও বিতরণ, নাগরিকদের ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ এবং ডাটাবেজে সংরক্ষণ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ ভবিষ্যতে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে সেবা প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসি প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত খরচের তথ্য তুলে ধরে ইসি সূত্র জানায়, ৯৭ জনের মূল বেতন ১২ কোটি ৩৫ লাখ, তাদের বাড়ি ভাড়া ছয় কোটি ৭১ লাখ, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৪১ লাখ, উৎসব ভাতা দুই কোটি পাঁচ লাখ, চিকিৎসা ভাতা ৮৭ লাখ, শিক্ষা ভাতা ৫৮ লাখ, নববর্ষ ভাতা ২০ লাখ, যাতায়াত ভাতা নয় লাখ, মোবাইল ভাতা ১২ লাখ, আবাসিক টেলিফোন নগদায়ন ভাতা ২৫ লাখ, টিফিন ভাতা ছয় লাখ, পোশাক ভাতা সাড়ে সাত লাখ, ব্যাটম্যান ভাতা পাঁচ লাখ, ক্ষতিপূরণ ভাতা তিন লাখ, অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা তিন লাখ, অধিককাল ভাতা ৩৫ লাখ, অন্যান্য ভাতা ও ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার ৫০ লাখ এবং সম্মানী ৩৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
প্রবাসে নিবন্ধন টিম ও প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন সংক্রান্ত ব্যয় (সংখ্যা এক কোটি ৪০ লাখ) ১০০ কোটি, স্মার্ট কার্ড বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় (সংখ্যা পাঁচ কোটি) ৭৫ কোটি, আপ্যায়ন খরচ এক কোটি, পরিবহন সেবা (সংখ্যা ১১ লাখ) ১১ কোটি ৪৩ লাখ, আইন সংক্রান্ত খরচ এক কোটি, মিটিং-সেমিনার-কনফারেন্স খরচ (সংখ্যা ৭৫) দুই কোটি ৫০ লাখ, ইউটিলিটি সেবা দুই কোটি, ইন্টারনেট/ফ্যাক্স/টেলেক্স এক কোটি ৮০ লাখ, ডাক/কুরিয়ার ৫০ লাখ, টেলিফোন ৫০ লাখ, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খরচ ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা।
অডিও-ভিডিও/চলচ্চিত্র নির্মাণে (২০টি) এক কোটি, আউটসোর্সিং সেবায় ৩৫৬ কোটি ৫১ লাখ, যানবাহন নিবন্ধন নবায়ন, ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেসে (১২টি) ৬০ লাখ, ব্যাংক চার্জ ৫০ লাখ, ব্যবস্থাপনা ব্যয় (অফিস ভাড়া/বিদ্যুৎ বিল/ডকুমেন্ট স্ক্যানিং) ১৬ কোটি ৫৮ লাখ, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে (৫৯০০ জন) চার কোটি, বিদেশ ভ্রমণে (৬২ জন) এক কোটি, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে ব্যয় দুই কোটি, যানবাহন ও জেনারেটরের জন্য পেট্রোল, ওয়েল, ডিজেল, লুব্রিকেন্টে তিন কোটি ৬৩ লাখ, যানবাহনের জন্য গ্যাস ৩৫ লাখ, স্মার্ট কার্ড ক্রয়, উৎপাদন, পারসোনালাইজেশন ও উপজেলা পর্যায়ে প্রেরণ সংক্রান্ত ব্যয় ৫৫৪ কোটি, স্ট্যাম্প ও সিল খরচ ৫০ লাখ, অন্যান্য মনোহারি খরচ এক কোটি, পরামর্শ সেবা ২৮ কোটি ৭০ লাখ, কম্পিউটার সামগ্রী ও কম্পিউটার কনজিউমেবলসে এক কোটি, মোটরযান মেরামত (১২টি) ৬০ লাখ, আসবাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণে তিন লাখ, কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণে দুই কোটি, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি রক্ষণাবেক্ষণে ২৩ কোটি, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে খরচ পাঁচ লাখ, মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় চার কোটি ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
নির্বাচন ভবনের অতিরিক্ত হিসেবে এনআইডি সেবা, কলসেন্টার, পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকল্পের জনবলের সংস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রকল্প কার্যালয় হিসেবে অনাবাসিক ভবন (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবন) ভাড়া করা হবে। এনআইডি সেবা, কলসেন্টার পরিচালনার লক্ষ্যে অফিস ভবনগুলোর বিদ্যুৎ বিল ও অফিস ভাড়া বাবদ পাঁচ বছরে ১১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে ইসির তরফ থেকে।
অর্থসংবাদ/ এমএস