শুধু সন্দেহ করেই বসে থাকেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা; তারা দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের শুনানীতে ডেকেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন এক্সচেঞ্জটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ। শুনানীতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে না পারলে বা তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ খণ্ডাতে না পারলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসির কারণ দর্শানরও নোটিসের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ জরুরী বৈঠক করেছে। আর ওই বৈঠকে আইনের আলোকে বিএসইসির জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
অন্যদিকে বাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর পতনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে মনে করছে বিএসইসি। বিশেষ করে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্সের দর পতনের পেছনে আইসিবি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চাপ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বিএসইসির অভিযোগ। এই অভিযোগে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কারণ দর্শানরও নোটিশ পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তীব্র দর পতনের প্রেক্ষিতে গত বছরের জুলাই মাসে বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি কারণ উঠে আসে। এর মধ্যে রয়েছে অস্বাভাবিক দর পতনের পেছনে ডিএসই ও আইসিবির ভূমিকার বিষয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে মূলত তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসিআই সংশ্লিষ্ট কিছু ইস্যুতে ডিএসইর অনধিকার চর্চা, সিকিউরিটিজ আইনের লংঘন এবং বাজারে আতঙ্ক ছড়ানোর অইভযোগ আনা হয়।
উল্লেখ, ব্লুচিপ কোম্পানি এসিআই লিমিটেড ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর’১৮’ডিসেম্বর’১৮) অনিরীক্ষিত প্রকাশ করলে দেখা যায় কোম্পানিটি ওই প্রান্তিকে ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান করেছে। তাতে শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৩৭ পয়সা। অথচ আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা। এর প্রেক্ষিতে ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ডিএসইকে একটি চিঠি দেয়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন- ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী।
এই কমিটি গঠন, কোম্পানিটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া, বিষয়টি বিএসইসির কাছে পাঠানোসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে।
এই বিষয়গুলোকে এখতিয়ার বহির্ভূত বলা হয়েছে বিএসইসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, আলোচিত কমিটির একাধিক সদস্য এসিআই সম্পর্কে এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, যেগুলো মূল্যসংবেদনশীল। তারা এসব তথ্য গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছেন, আবার বিজ্ঞপ্তি আকারেও প্রকাশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয় এবং এসিআইয়ের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়, যা পরবর্তীতে সার্বিক বাজারের দর পতনে ভুমিকা রাখে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসিআই সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচিত কমিটি গঠন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্টভাবে সিকিউরিটিজ আইনের লংঘন।
অন্যদিকে আইপিডিসি’র শেয়ারের দর পতনের জন্য আইসিবি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি এএমসিএল ম্যানেজমেন্টকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের আগ্রাসী বিক্রির চাপে ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। এতে বলা হয়, আলোচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক বিক্রির চাপে আইপিডিসির শেয়ারের দাম প্রায় ৪৮ শতাংশ কমে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই ২৪ টাকায় নেমে আসে।