বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এবং বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশন স্টার্টআপ বাংলাদেশ যৌথভাবে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড প্রদানের কাজ করছে। যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা খুঁজে পাবে নিজের কাজের সনদ।
বিএফডিএসের চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান বলেন, উদ্যোগটি বেসরকারিভাবে শুরু করলেও এ নিয়ে সরকারের ভাবনা অনেক দিন থেকেই। তাই যৌথভাবে শুরু হলো এ উদ্যোগ। তবে কারিগরি পুরো বিষয়টি দেখভাল করবে বিএফডিএস। দেশে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আসছে ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় সেগুলোর সঠিক হিসাব ছিল না। অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সাররাও পড়ছেন নানা ধরনের সমস্যায়। এরই মধ্যে আমাদের সাইটে আট হাজার ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ধীরে ধীরে দেশের সব ফ্রিল্যান্সার যুক্ত হবেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এ আইডি কার্ডটি থাকবে সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল। তবে এটি যে কেউ চাইলে প্রিন্ট দিয়ে নিতে পারবেন।
আইডি কার্ডের জন্য নিবন্ধন যেভাবে করবেন: ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড পেতে নিবন্ধনের জন্য যেতে হবে (freelancers.gov.bd) ওয়েবসাইটে। নাম (এনআইডি অনুসারে), ই-মেইল, মোবাইল এবং আট অক্ষরের পাসওয়ার্ড দিয়ে এখানে অ্যাকাউন্ট সাইনআপ করা যাবে। অ্যাকাউন্ট সাইনআপ করার সময় ই-মেইল ভেরিফাই করতে বলা হবে। ভেরিফিকেশন শেষে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করা যাবে। লগইন করার পরের কাজটি গুরুত্বপূর্ণ। ‘ফ্রিল্যান্সার আইডি’ বাটনে ক্লিক করা হলে চার ধাপের একটি ফরম আসবে। প্রথম ধাপে নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি চাওয়া হয় ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করার জন্য), ফোন নম্বর দিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে ফ্রিল্যান্সারকে তার কাজের যাবতীয় তথ্য এবং সর্বশেষ ১২ মাসের আয়ের পরিমাণ জমা দিতে হবে। তৃতীয় ধাপে ক্যারিয়ার বিষয়ক আরো কিছু তথ্য দিতে হয় এবং সর্বশেষে ছবি সংযুক্ত করতে হয়। যেহেতু এ তথ্য ব্যক্তির এনআইডির বিপরীতে যাচাই হবে, তাই এমন ছবি নির্বাচন করতে হবে যেন এনআইডিতে থাকা ছবি আর এ ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করা ছবির মধ্যে মিল থাকে। আবেদন জমা দেয়ার সাতদিনের মাঝে যাচাই করে ই-মেইলের মাধ্যমে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে।
যে কেউ চাইলেই নিজেকে ফ্রিল্যান্সার দাবি করে আইডি নিতে পারবেন না। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, শেষ ১২ মাসে অন্তত ১ হাজার ইউএস ডলার আয়, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার ও ইনকামের প্রমাণ এবং সঠিক পথে আয় থাকতে হবে। এ চার শর্তের সব পূরণ করতে পারলে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সারের আয়ের তথ্যটি ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করা হবে। আয় ১ হাজার ডলার বলা হলে ব্যাংক বা আয়ের কোনো মাধ্যমে সে ডলারের হিসাব না থাকলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। তাই কোনোভাবেই ভুল তথ্য দেয়া যাবে না। ফ্রিল্যান্সার নিবন্ধন ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা, যা কার্ড বা এমএফএসে পরিশোধ করা যাবে। প্রতি ১২ মাসে একবার তথ্য হালনাগাদ করতে হবে এবং হালনাগাদ ফি প্রতি বছরের জন্য ১৫০০ টাকা।
অনেকে আবার মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন না। তবে ফ্রিল্যান্সার সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিদেশে থাকা ক্লায়েন্ট কত টাকা কীভাবে পাঠিয়েছে, তার স্টেটমেন্ট দিতে হবে। সব তথ্য ঠিক থাকলে সাত কর্মদিবসের মধ্যেই ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু হবে। তথ্য নিশ্চিত করতে আবেদনকারী ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে ভিডিও কল বা অন্য যে কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করা হতে পারে। উপার্জনের প্রমাণ হিসেবে যে কোনো কাগজ বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া হতে পারে। যদি কেউ মার্কেটপ্লেস বা সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ না করে থাকেন, লোকালি কারো অধীনে কাজ করেন, তারাও নিবন্ধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তারা ফ্রিল্যান্সারের টিম মেম্বার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন।
কার্ডের সুবিধা: শিগগিরই freelancers.gov.bd ওয়েব পোর্টাল এবং অ্যাপে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আরো কিছু ফিচার যুক্ত করা হবে। এ ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে টিউটোরিয়াল হাব, মেন্টর মার্কেটপ্লেস, ফ্রিল্যান্সার ইভেন্টস, ফ্রিল্যান্সারস ব্যাংকিং, ফ্রিল্যান্সারস ওয়েলফেয়ার ও কমিউনিটি ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সারদের ব্যক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড সরকারের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে।
অর্থসংবাদ/এসএ