এ পরিস্থিতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের শীর্ষ ভোক্তা ও আমদানিকারক দেশ চীনে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে জ্বালানি তেলের দরপতনের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। এ ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। দিন শেষে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড বিক্রি হয়েছে ৫৩ ডলার ২৭ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ২০ সেন্ট কম। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরের পর এটাই ব্রেন্ট ক্রুডের সর্বনিম্ন দাম। অন্যদিকে এদিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছে ব্যারেলে ৭৫ সেন্ট। দিন শেষে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের দাম দাঁড়িয়েছে ৫০ ডলার ৫৭ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ কম। গত ৭ জানুয়ারির পর এটাই ডব্লিউটিআইয়ের সর্বনিম্ন দাম।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সাপ্তাহিক গড় দাম নিম্নমুখী রয়েছে। নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে সর্বশেষ সপ্তাহে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৫০ ডলার ৩২ সেন্টে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কম। এ সময় ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৫৪ ডলার ৪৭ সেন্টে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর এটাই আইসিইতে ব্রেন্ট ক্রুডের সর্বনিম্ন গড় দাম। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই ও ব্রেন্ট ক্রুড যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দরপতনের বড় কারণ চাহিদায় কমতি ভাব। এ বিষয়ে গোল্ডম্যান স্যাকসের পণ্যবাজার বিশ্লেষণ বিভাগের বৈশ্বিক প্রধান জেফ কারি বলেন, চীনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যনির্ধারণে ভূমিকা রাখে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় চাহিদা ২০-৩০ লাখ ব্যারেল কমতে পারে। একই সঙ্গে বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত চাহিদা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ব্যারেল কমে ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতি জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে লাগাম টানবে।
ইউরেশিয়া গ্রুপের এক নোটে বলা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাস চীনের পরিবহন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে প্রায় স্থবির করে রেখেছে। ফলে চীনা পরিশোধন কেন্দ্রগুলো জ্বালানি পণ্যটির আমদানি কমাতে বাধ্য হচ্ছে। নতুন আমদানি চুক্তি হচ্ছে না। পুরনো অনেক চুক্তি সাময়িক স্থগিত কিংবা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে চীনে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও আমদানি কমতির দিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দরপতনের লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ ব্যপারে স্টারফুয়েল কমোডিটি ব্রোকারেজের পরিচালক ম্যাট স্ট্যানলি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে চাহিদায় মন্দা ভাব বজায় থাকাটা জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতির জন্য ভালো কোনো খবর নয়। দরপতনের বর্তমান হার বজায় থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের (বিশেষত ব্রেন্ট ক্রুডের) ব্যারেল ৪৫ ডলারের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে।
বিগত ২০১৪-১৫ সালের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৩০ ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। ওই সময় জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের জোট ওপেক বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাস চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উত্তোলন ও সরবরাহ কমিয়ে বাজার ভারসাম্য ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। ওই চুক্তি এখনো মেনে চলছে ওপেক-নন ওপেক দেশগুলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে জ্বালানি তেল উত্তোলন আরো কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব। ওমান, আজারবাইজান, ইউএইসহ কয়েকটি দেশ এতে সায় দিলেও রাশিয়া জানিয়েছে, এখনই এ প্রস্তাব মেনে নেয়া সম্ভব নয়। ফলে জ্বালানি তেলের বাজার ভারসাম্য ফেরাতে উদ্যোগের সফলতা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। এ সংশয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতনের পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।সুত্র: ব্লুমবার্গ, সিএনএন, এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ও অয়েলপ্রাইসডটকম।