এডিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের পুঁজিবাজার সংস্কারে ২৫ কোটি ডলারের সিএমডিপি-৩ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে দেয়া ৮ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার মধ্যে ৭ লাখ ডলারের কারিগরি সহায়তা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ৩ লাখ ডলার কোরিয়া সরকারের ই-এশিয়া ও নলেজ পার্টনারশিপ ফান্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়।
এডিবির ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর স্পেশালিস্ট তাকোয়া হোশিনো বলেন, সিএমডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে এডিবির দীর্ঘমেয়াদি সংযোগের ফলে আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর রূপান্তর ঘটেছে। মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে অবকাঠামো খাতের মতো অর্থবহ খাতে বিনিয়োগে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নীতির সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এডিবির প্রকল্পের মাধ্যমে একটি টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে সরকারও আগ্রহী।
এডিবি ২০১২ সালে সিএমডিপি-২ প্রকল্প অনুমোদনের সময় থেকেই পুঁজিবাজারের বর্তমান সংস্কার কার্যক্রমকে সহায়তা করে আসছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের বাজার ধসের পর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের পথে পুঁজিবাজারকে ফিরিয়ে আনাই ছিল এ প্রকল্পের লক্ষ্য। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ বছর মেয়াদি জাতীয় পুঁজিবাজার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন, উন্নত করপোরেট সুশাসন, আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষাকে আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য করা এবং বীমা খাতের উন্নয়নে বেশকিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এডিবি বলছে, সিএমডিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে যে ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে, সেটিকে আরো বিস্তৃত ও গভীর করার পাশাপাশি টেকসই পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ২০১৫ সালে সিএমডিপি-৩ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মূল্য লক্ষ্যই ছিল নিয়ন্ত্রক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রকৃত সংস্কার নিশ্চিত করা। যার মধ্যে রয়েছে বিএসইসির নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি সক্ষমতা শক্তিশালী করা, বাজার মধ্যস্থতাকারীদের জন্য ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিমিউচুয়ালাইজড দুই স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন পণ্য প্রচলন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) প্রতিষ্ঠা এবং বীমা খাতের সুশাসনকে শক্তিশালী করা।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও সিএমডিপি-৩ প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, সিএমডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ২৬টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে দুই ধাপে এডিবির ২৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে আটটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৮ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে এডিবি। আর দ্বিতীয় ধাপে ১৮টি শর্ত পূরণ করায় এবার বাকি ১৭ কোটি ডলার ঋণের অর্থছাড় করেছে এডিবি। বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আইডিআরএ) সম্মিলিতভাবে এসব শর্ত পূরণ করেছে। ডেরিভেটিভস, শর্টসেলিংসহ আরো বেশকিছু বিধি-বিধান এ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে বিএসইসিতে যে অটোমেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সেটিও বাস্তবায়ন হয়েছে এডিবির দেয়া শর্তের কারণেই। দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে সিএমডিপি প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে এডিবির সংশ্লিষ্টতা দীর্ঘদিনের। ১৯৯৬ সালের ধসের পর পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে সিএমডিপি-১ প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয় এডিবি। এরপর ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর আবারো পুঁজিবাজারকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে সংস্থাটি। ২০১২ সালে সিএমডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় এডিবি দুই ধাপে ৩০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেয়। আর সর্বশেষ ২০১৫ সালে সিএমডিপি-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই ধাপে ২৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয় এডিবি। এবার দ্বিতীয় ধাপের ১৭ কোটি ডলার ছাড় করার মাধ্যমে সিএমডিপি-৩ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটল।