আজ বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক স্তর এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের নিকট বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, দুই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আফছারুল আমীন ও মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
করোনোর কারণে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। স্কুল খোলা সম্ভব না হলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান চলবে। ভর্তির ব্যবস্থাটাও অনলাইনে চলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ঘরে বসেই শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা যখনই সিদ্ধান্ত নিলাম স্কুল খুলে দেব, তখনই দ্বিতীয় ধাক্কা চলে আসলো। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর আমরা যদি নিরাপদ মনে করি স্কুল খুলে দেবো, না হলে বন্ধ থাকবে। তবে স্কুল বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে।’ এসময় করোনার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নতুন বই ছাপানোয় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা জানি, এতে আমাদের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে।’
তিনি বাবা-মায়েদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ছেলেমেয়েদের সময় দেবেন। তারা যেন খেলাধুলা করতে পারের সেই ব্যবস্থা করবেন। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটা খেয়াল রাখবেন। শুধু ঘরে বসে না থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাইকে খোলা ও আলো-বাতাসপূর্ণ জায়গায় বের হওয়ার পরামর্শ দেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় যাতে তারা মানসিকভাবে কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বই বিতরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩০০ জন শিক্ষার্থী ও সেসব স্কুলের একাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি বেশকিছু শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে সর্বমোট পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য দুই কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৭১ টি বই, তৃতীয়-চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ছয় কোটি ৯৬ লাখ, ৯৭ হাজার ৩৭৪ টি।
এর মধ্যে ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ১৩ হাজার ২৮৮টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষায় শুধুমাত্র বাংলা বইটি পাবে।এবছর সাঁওতাল ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আগামীকাল বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বই বিতরণ শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তিন দিন করে মোট ১২দিন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণ করা হবে।