এর কারণেই নতুন নতুন রেকর্ড হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। ফলে অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচক হিসেবেই গত বছর পার করে প্রবাসী আয় খাত।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বন্ধ হয় অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসার প্রবণতা। এর প্রভাব পড়ে বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে। আর আমদানি খরচ কমে যাওয়ার কারণেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড হয়।
২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ফলে প্রবাসী আয় তখন থেকে বাড়তে শুরু করে। তবে করোনায় হঠাৎ ধাক্কা লাগে প্রবাসী আয়ে। অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচকটি থেকেই খারাপ খবর আগে সবার আগে। কারণ প্রবাসী-অধ্যুষিত দেশগুলোতে ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলে লকডাউন। এর প্রভাবেই মার্চ মাসে প্রবাসী আয় কমে প্রায় ১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ১৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে, সেখানে মার্চে তা কমে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারে নেমে আসে। যা ২০১৯ সালের একই মাসে ছিল ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। আর করোনা মহামারী আরও প্রকট হলে এপ্রিলে প্রবাসী আয় আরও কমে হয় ১০৮ কোটি ডলার। তবে এরপরই রেমিটেন্স বাড়তে থাকে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির নতুন নতুন রেকর্ড হতে শুরু করে।
মে মাসে রেমিটেন্স আসে ১৫০ কোটি ডলার। যা জুনে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ডলার। আর ঈদের আগের মাস জুলাইয়ে এক লাফে প্রবাসী আয় ২৬০ কোটি ডলারে ওঠে। একক মাস হিসেবে এই আয় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এরপর আগস্টে ১৯৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলার, অক্টোবরে ২১০ কোটি ডলার ও নভেম্বরে ২০৭ কোটি ডলার আসে। আর ডিসেম্বরের প্রথম ২৯ দিনে আসে ১৯১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স। এভাবে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
এদিকে মহামারীর বছরেই দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪৩ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
দুই সপ্তাহে রিজার্ভে যোগ হয়েছে আরও এক বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ১১ বিলিয়ন ডলারের মতো। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর রিজার্ভে ছিল ৩২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে প্রায় সাড়ে দশ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।