বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির স্বল্প সংখ্যক শেয়ার থাকার কারণেই এমন দর বাড়ছে। তারা বলছেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ওয়ালটন এক শতাংশেরও কম শেয়ার ছেড়েছে। বাজারে এত অল্প শেয়ার থাকায় হুটহাট দর বাড়ছে।
ওয়ালটন আইপিওতে কী পরিমাণ শেয়ার ছাড়বে তা নির্ধারণ করে দেয় যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। বিডিংয়ে (নিলাম) যোগ্য বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করে দেয় ৩১৫ টাকা। এর ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬টি সাধারণ শেয়ার ২৫২ টাকা মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীর (অনিবাসী বাংলাদেশিসহ) কাছে বিক্রি করে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম আট কার্যদিবসেই দর বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে হল্টেড হয়। এতে ১০ টাকা দরের একটি শেয়ারের দর ৮৭৪.৮০ টাকায় ওঠে। এরপরও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। দফায় দফায় দর বেড়ে ৬ অক্টোবর এক হাজার টাকায় পৌঁছায়।
এই দর বাড়ার মধ্যেই ওয়ালটনের শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নিয়ে সমালোচনা চলতে থাকে। যে সমালোচনার শুরু হয় কাট-অপ প্রাইস নির্ধারণের পর থেকেই। সমালোনার মধ্যে ২১ অক্টোরব কমিশন সভা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিদ্ধান্ত নেয়, যোগ্য বিনিয়োগকারীরা (ইলিজিবল ইনভেস্টর) নীতিমালা অনুসারে ওয়ালটনের দর প্রস্তাব করেছে কিনা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
এরপর কোম্পানিটির শেয়ার কিছুটা দরপতনের মধ্যে পড়ে। টানা পতনের কারণে ২৮ অক্টোবার ওয়ালটনের শেয়ার দর ৬৩৭ টাকায় নেমে আসে। এরপর ছোট খাট উত্থান-পতন হলেও ৩০ নভেম্বর থেকে শেয়ারে দর টানা বাড়তে থাকে। দফায় দফায় দর বেড়ে ২০ ডিসেম্বর প্রতিটি শেয়ারের দর এক হাজার ৭৪ টাকায় ওঠে।
এরপর আবার কিছুটা দরপতন হয়। ২৩ ডিসেম্বর প্রতিটি শেয়ারের দর কমে ৯৬১.২০ টাকা নেমে যায়। অবশ্য ২৪ ডিসেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর আবার টানা বাড়ছে। এতে ৩ জানুয়ারি লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৭৯.১০ টাকায়। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর বিএসইসির কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কাট-অফ প্রাইসের ২০০ শতাংশের অধিক মূল্যে যেসব যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিং করেছেন তারা পরবর্তী তিনটি আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন না।
এ ছাড়া যেসব যোগ্য বিনিয়োগকারী ১৫০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশের অধিক মূল্যে বিডিং করেছেন তাদেরকে পরবর্তী দুটি এবং কাট-অফ প্রাইসের ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশের অধিক মূল্যে যেসব যোগ্য বিনিয়োগকারী বিডিং করেছেন তাদেরকে পরবর্তী একটি আইপিওতে অংশ গ্রহণের জন্য অযোগ্য করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
অতিরিক্ত দর প্রস্তাব করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার শাস্তির আওতায় আসলেও ওয়ালটনের শেয়ার দর বাড়ার ক্ষেত্রে তা কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। বরং কোম্পানিটির শেয়ার দর টানা বেড়েই চলছে। যে কারণে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত লেনদেন হওয়া মাত্র ছয় কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দর সম্মেলিতভাবে বেড়েছে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ৮০ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪০ টাকা। আররেকটি শেয়ারের দর বেড়েছে ২৭১.২০ টাকা।
শেয়ারের এমন দর বাড়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা বেশি লাভবান হয়েছেন। কারণ, ৩০২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৯৯.০৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ০.৭০ শতাংশ। আর ০.২৭ শতাংশ শেয়ার আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে।
ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের খরচ মেটাতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য গত বছরের ৭ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে বিডিংয়ে অংশ নেয়ার অনুমোদন দেয়।
এ অনুমোদনের ফলে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে গত ২ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে ৫মার্চ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৩৩ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী বিডিংয়ে অংশ নেন। এসব বিনিয়োগকারীরা সর্বনিম্ন ১২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৬৫ টাকা করে ওয়ালটনের শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তাব দেন।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক যোগ্য বিনিয়োগকারী ওয়ালটনের প্রতিটি শেয়ারের জন্য ২১০ টাকা দর প্রস্তাব করেন। এই দরে ১৪ জন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিনিয়োগকারী দর প্রস্তাব করেন ১৫০ টাকা করে। এই দরে ১০ জন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখান। তবে বিডিংয়ে বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ারের জন্য ৩১৫ টাকার ওপরে বিডিং হয়। ফলে কাট-অফ প্রাইস হিসাবে ৩১৫ টাকা নির্ধারিত হয়।