এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। নিকট ও তুলনামূলক দূর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থায় গতি আনা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এর মাধ্যমে। চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার কথা। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে।
প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগে ভৌগোলিকভাবে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে আঞ্চলিক উন্নয়ন বিবেচনায় বাংলাদেশের সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে এবং বিমসটেক করিডোরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের নেটওয়ার্কের পাশাপাশি এই মহাসড়কটি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ উন্নয়নের প্রধান করিডোর। এসব কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেটের পীর হাবিবুর রহমান চত্বর পর্যন্ত মোট ২২৩ কিলোমিটার। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ তালিকায় নেই। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পের আওতায় এই মহাসড়কটি আন্তর্জাতিক মানে চার লেনে উন্নীত করা হবে। মহাসড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন থাকবে। মহাসড়কের বাঁকগুলো সোজা করা হবে। অত্যাধুনিক ফ্লাইওভার, ওভার পাস, রেলওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া অতিমাত্রায় যান চলাচলের বিবেচনায় ঘণ্টায় সর্বনিম্ন ৮০ কিলোমিটার গতি নিশ্চিত করার মতো মসৃণ করা হবে, যাতে নির্ধারিত সময়ে যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছাতে কোনো সমস্যা না হয়। অত্যাধুনিক আরও কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে এতে।
অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, মহাসড়কটি নির্মাণ হলে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চীন এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। সড়কপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হবে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারনির্ভরতা কমতে পারে এর মাধ্যমে। বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার চীন। মোট আমদানির ৪০ শতাংশেরও বেশি আসে দেশটি থেকে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের সব ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে চীননির্ভরতা আছে। রপ্তানিও বাড়ছে দেশটিতে। প্রায় একই রকম পরিস্থিতি ভারতে বেলায়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, অর্থায়নে সম্মত এডিবি। করোনার কারণে গত ডিসেম্বরে এডিবির মিশন আসতে পারেনি। শিগগিরই ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে এডিবির ওয়েবসাইটে প্রকল্পটি প্রদর্শন করা হচ্ছে।