এ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপের অন্যতম সদস্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারস। ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে সবসময়ই এ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারস এগিয়ে। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তেনামপেট-এর এ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার নতুন টিউবলেস (VATS) পদ্ধতি ব্যবহার করে ১৫ বছর বয়সী একজন বাংলাদেশী রোগীর ক্যান্সার নিরাময়ে সফল হয়েছে। ভারতে এই পদ্ধতি প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হলো।
রোগী মো. নাহিদ হোসেনের বাঁ পায়ের উরুর হাড়ে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ইউয়িং’স সারকোমা ধরা পড়ে। এই সারকোমা দুর্লভ একধরনের ক্যান্সারের টিউমার, যা হাড়ে বা হাড়কে ঘিরে যে নরম অস্থি বা স্নায়ু থাকে সেখানে দেখা দেয়। সাধারণত ১০-২০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এই অসুখটি বেশি দেখা যায়।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নাহিদকে চেন্নাইয়ের এ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষার পর বোঝা যায় রোগীর বাঁ ফুসফুস অবধি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। রোগীর পূর্ববর্তী বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে তাকে টিউবলেস (VATS) পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে শারীরিক অনুপ্রবেশের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। কোনো টিউবের সাহায্য না নিয়েই রোগীর বাঁ ফুসফুসের মেটাস্টেসিস নডিউল সরানো হয়। অপারেশনটি সফল হওয়ার পরদিন রোগীকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়।
এ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের কনসালট্যান্ট থোর্যাসিক অনকোলজিস্ট ড. অভিজিৎ দাস পদ্ধতিটি সম্পর্কে বলেন: “টিউবলেস (VATS) পদ্ধতিতে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যা সাধারণ পদ্ধতিতে নেই। শারীরিক অনুপ্রবেশের প্রয়োজনীয়তা কম হওয়াতে রোগীর ব্যথা কম লাগে, রক্তক্ষরণ কম হয় এবং অপারেশনের পর সে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরেও টিউবলেস (VATS) পদ্ধতি কম প্রভাব ফেলে, যে কথা ওপেন সার্জারির বেলায় বলা যাবে না। এই পদ্ধতিতে অপারেশন-পরবর্তী ইনফেকশন বা অন্যান্য জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাছাড়াও শরীরে টিউব প্রবেশ করার সময়ের ঝুঁকি, চেস্ট ড্রেইনেজ আর ইউরিনারি ক্যাথেটারাইজেশন-এই সবকিছু টিউবলেস (VATS) পদ্ধতির সাহায্যে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।”
একইভাবে ২০১৬ সালে ২৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি জনাব মোহাম্মদ ইফতেখার রহমানের বাঁ উরুতে অস্টিওসারকোমা বা হাড়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। অসুখটির চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে লিম্ব সার্জারির মাধ্যমে টিউমার সরানো হয়। বেশ কয়েকবার কেমোথেরাপি দেওয়ার পরও টিউমারের আকার অপরিবর্তিত থাকে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে রোগীকে এ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তাররা বুঝতে পারেন রোগীর দুই ফুসফুসেই ক্যান্সার ছড়িয়ে গেছে। যার ফলে দেখা দিয়েছে বাইল্যাটেরাল লাঙ মেটাস্টেসিস।
এ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের কনসালট্যান্ট থোর্যাসিক অনকোলজিস্ট ড. খাদের হুসেইন অসুখটির বিষয়ে বলেন: “রোগীর দুই ফুসফুসেই মেটাস্টেসিস হওয়াতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তার পরিবারের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর আমরা বাইল্যাটারাল (VATS) মেটাস্ট্যাটেকটমি করি। বাঁদিকের নিম্নাংশের লোবের লাঙ লোবেক্টমিও অপারেশনের অংশ ছিলো। অপারেশনের দুই দিন পর রোগী সেরে ওঠে এবং তাকে সুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়।”
বাংলাদেশের মাননীয় ডেপুটি হাই কমিশনার মি. মো: লুৎফর রহমান ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে রোগী এবং এ্যাপোলো দলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ্যাপোলো চেন্নাই হাসপাতালের অত্যাধুনিকে সরঞ্জাম এবং ক্লিনিক্যাল দলের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান, এর ফলেই বাংলাদেশ থেকে আগত রোগীরা সুলভ মূল্যে জীবন বাঁচানোর সুযোগ পেয়েছে। তিনি আরও মন্তব্য করেন যে, অন্যরকম এই সময়ে, স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে অ-সংক্রামক রোগ থেকে শুরু করে মহামারির বোঝা পর্যন্ত একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে; তবুও এ্যাপোলো হসপিটালস দায়িত্ব নিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে দক্ষতা প্রদর্শন করেই চলেছে।
এ্যাপোলো হসপিটাল গ্রুপের ভাইস চেয়ারপারসন মিস পৃথা রেড্ডি বলেন, “WHO-এর পরিসংখ্যান শুধুমাত্র ২০২০ সালে সালে ১৩ লক্ষেরও বেশি রোগ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড করা হয়েছিল, সাথে আরও ৮.৫ লাখ মানুষ রোগাক্রান্ত হওয়ার পথে ছিল। দেশের ক্যান্সার রোগীদের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তি এবং উদ্যোগের সংযোজন নিয়ে এ্যাপোলো হাসপাতাল ক্যান্সারের লড়াইয়ে সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে। কোভিড-এর সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্যারামিটার এবং বিধিনিষেধ মেনে চলে এ্যাপোলো ক্যান্সার কেন্দ্রগুলো ক্যান্সার রোগীদের পক্ষে যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।"
ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় টিউবলেস ভ্যাটস (VATS) পদ্ধতি নতুন এক বিপ্লব নিয়ে এসেছে। কারণ এটি চরম জটিলতায় আক্রান্ত রোগীদের উন্নত পদ্ধতিতে দ্রুত পুনরুদ্ধার করে এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এক দিনের সার্জারি হিসেবেও চালানো যেতে পারে।