আইফোনপ্রেমীদের মধ্যে ফাইভজি সমর্থিত আইফোন দীর্ঘদিন প্রত্যাশিত ছিল। গত কয়েক বছর নিয়মিত আইফোনের নতুন সংস্করণ উন্মোচন করা হলেও অনেকেই ডিভাইস হালনাগাদ করা থেকে বিরত থেকেছে। গত বছরের শেষদিকে ফাইভজি সমর্থিত আইফোন ১২ সিরিজের ডিভাইস উন্মোচন চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অ্যাপলকে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে।
গার্টনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে অ্যাপল প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাংয়ের তুলনায় ১ কোটি ৮০ লাখ ইউনিট বেশি স্মার্টফোন বিক্রিতে সক্ষম হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে মোট যত সংখ্যক ইউনিট আইফোন বিক্রি করেছে, তার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং গত বছর চতুর্থ প্রান্তিকে মোট ৬ কোটি ২০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করে বৈশ্বিক বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে স্থান পেয়েছে।
অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ পাঁচে স্থান পাওয়া স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে শুধু অ্যাপল ও শাওমি বিক্রি প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। শীর্ষ পাঁচে স্থান পাওয়া বাকি দুই স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হলো হুয়াওয়ে ও অপো। গত প্রান্তিকে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রিতে ৪১ শতাংশ পতন দেখা গেছে।
গার্টনারের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হুয়াওয়ে। ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির ওপর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যে কারণে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন গুগলের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। হুয়াওয়ের ফোন বিক্রি কমার এটাই প্রধান কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৯ সালের শেষদিকে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত বছরের শুরুতে স্মার্টফোন উৎপাদন ব্যাহত হয়। কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে চুক্তিভিত্তিক স্মার্টফোন সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো টানা কয়েক মাস উৎপাদন বন্ধ রাখে। ফলে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়। তবে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা কমতে শুরু করলে ডিভাইস উৎপাদন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং বিশ্বজুড়ে বাসায় থেকে কাজের সংস্কৃতি চালু ও অনলাইন শিক্ষার প্রসারে মোবাইল ডিভাইসের চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়।
গার্টনারের তথ্যমতে, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চাহিদা বাড়লেও তা বছরজুড়ে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। গত বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাজারে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আর বছরজুড়ে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার চলতি বছর বিক্রয় প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গার্টনার। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ টেলিকম বাজারগুলোয় ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। শুরুতে ফাইভজি ফোনের দাম বেশ চড়া ছিল। এখন ফাইভজি ডিভাইস সাশ্রয়ী হয়েছে। এছাড়া অ্যাপলসহ প্রায় সব ডিভাইস ব্র্যান্ড ফাইভজি সমর্থিন স্মার্টফোন বাজারে ছেড়েছে। আর সাশ্রয়ী ডিভাইস চলতি বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
গত বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ফাইভজি ডিভাইস নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছিল স্মার্টফোন নির্মাতারা। সামগ্রিকভাবে ডিভাইস বিক্রিতে পিছিয়ে পড়লেও ফাইভজি ফোন বিক্রির প্রতিযোগিতায় লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়েছে স্যামসাং। ২০১৯ সালে ফাইভজি নেটওয়ার্কের পরীক্ষামূলক সূচনা হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। গত বছর ইউরোপ-আমেরিকায় এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সেবাদান শুরু হয়েছে। তবে ফাইভজির বিস্তৃতিতে বড় অবদান রেখেছে চীন। বেইজিং, সাংহাইসহ দেশটির শতাধিক বড় শহরে একযোগে এ নেটওয়ার্ক চালু করা হয়।