আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘যারা রাতে-দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের মাল-সম্পদ খরচ করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট বদলা রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সূরা বাকারাহ: ২৭৪)
ইসলামের কিছু অতি সাধারন ও সুন্দর নিয়ম মেনে চললেই মানুষ অতি মহত গুণ ও চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। ইসলামের এই সকল নির্দেশাবলীর অন্যতম হচ্ছে, মানুষের সাথে ভাল আচরণ করা, ধৈর্য ধারণ করা, ক্ষমা করা, সহনশীলতা, পরপোকারী হওয়া, উদারতা এবং দয়ালু ও মহতপ্রাণ হওয়া।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) বলেছেন: মানুষের সাথে সহনশীল হওয়া ঈমানের অর্ধেক। আর তাদের সাথে স্নিগ্ধতা এবং উদারতা হলো জীবনের অর্ধেক।
ইমাম জাফর সাদিক(আ.) বলেছেন: আল্লাহর শত্রুদের সাথে সহনশীলতা হল এমন এক সর্বোত্তম দান বা সদকা যা মানুষ নিজের এবং তার ভাইদের পক্ষ থেকে দিয়ে থাকে।
মানুষের ইহকালীন জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করার ব্যাপারে ইসলামের বিধান অনুযায়ী ধৈর্য ও সহনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সহনশীলতা ও নামাযের মাধ্যমে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ সহনশীলতাদের সাথে আছেন।’ (সূরা বাকারা আয়াত ১৫৩)
সদকা বা দানের গুরুত্ব
ধন-সম্পদ ও রিজিক বৃদ্ধি:
আল্লাহ তা’আলা বলেন: ‘আল্লাহ তা’আলা সুদকে বিলুপ্ত করেন এবং সাদাকাকে বৃদ্ধি করেন।’ (বাকারাহ: ২৭৬)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘সাদাকা কোনও মালকে হ্রাস করে না।’ (মুসলিম, নং ২৫৮৮)
রোগ থেকে আরোগ্য:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘সাদাকার মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করো।’ (স্বাহীহ আল জামি, শাইখ আলবানী হাসান বলেছেন)
সঠিক ঈমানের প্রমাণ:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘সাদাকা হচ্ছে প্রমাণ।’ (মুসলিম, স্বহীহ আল জামি নং ৩৯৫৭)
পুণ্য ও তাকওয়া অর্জনের উপায়:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্য লাভ করবে না।’ (আল্ ইমরান/৯২]
আত্মাকে পাক ও পরিশুদ্ধ করে:
আল্লাহ তা’আলা বলেন: ‘তাদের সম্পদ থেকে সাদাকাহ গ্রহণ করবে যাতে তা দিয়ে তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পার।’ (তাওবা: ১০৩)
কিয়ামত দিবসে সূর্যের তাপ থেকে ছায়া:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার সাদাকার ছায়াতলে থাকবে যতক্ষণে লোকদের মাঝে ফয়সালা শেষ না হয়।’ (আহমদ, শাইখ আলবানী স্বহীহ বলেছেন, স্বহীহ আল জামি নং ৪৫১০)
হাদীসে আছে- সাত প্রকারের লোক আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে। উল্লেখ হয়েছে, তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সে যে, গোপনে এমন ভাবে সাদাকা করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে তার বাম হাত জানতে পারে না।’ (বুখারী: ১৪২৩, মুসলিম : ১০)
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে- দান এবং সদকার মধ্যে উত্তম মাধ্যম কোনটি? যেমন: গরিবদের দান করা বা মসজিদে দান করা এই রকম আরো অনেক মাধ্যম আছে, এগুলোর মধ্যে উত্তম কেনিটি?
তাদের জন্য উত্তর হচ্ছে- সুনির্দিষ্টভাবে এটা বলা যাবে না যে, এই জায়গায় দান সদকা করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। এটা নির্ভর করবে পরিবেশের ওপর। যদি এমন হয় যে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্য অনেক বেশি, তাহলে দান-সদকা করার সর্বপ্রথম খাত হলো এটি। আল্লাহ ফকির এবং মিসকিনের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। যাদের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বা বেঁচে থাকার জন্য যে জিনিস প্রয়োজন সেগুলোর অভাব রয়েছে, তাদেরকে সদকা করা হলো প্রথম কাজ। কখনো কখনো সেই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, বড় ধরনের বন্যা হয়েছে বা বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, মহামারি হতে পারে, মানুষ আবাসহীন হয়ে গিয়েছে, তখন এইখানে দান সদকা করাটাই উত্তম।
কেউ যদি অতিরিক্ত দান করতে চান তবে ফকির মিসকিনদের দান করবেন। দানের মধ্যে আরেকটি উত্তম দান হচ্ছে সদকায়ে জারিয়া করা। সব সদকা কিন্তু সদকায়ে জারিয়া নয়। সদকায়ে জারিয়া হলো ওই সদকা যেটা সবসময় অব্যাহত থাকবে। যেমন, মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করা, টিউবওয়েল স্থাপন করা ইত্যদি সেটা আপনি মারা যাবার পরও অব্যাহত থাকবে এবং মানুষ সেখান থেকে উপকৃত হতে পারবে।
আরেকটি উত্তম সদকার কথা রাসুল (সা.) বলেছেন, সেটা হলো আপনার প্রয়োজন থাকা শর্তেও আপনি নিজে ত্যাগ করে দান করবেন, আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করবেন, সদকা করবেন, এই সদকা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সদকা।