এখন কি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়?

এখন কি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়?

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখন সবচেয়ে নাজুক এবং টালমাটাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে৷ এক বছরে ডিএসই ১৫৫৪ পয়েন্ট আর ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজার মূলধন হারিয়েছে৷ তবে এ অবস্থাকে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনাও মনে করছেন অনেকে৷


চীনের উহান থেকে উদ্ভব হওয়া করোনায় বিধ্বস্ত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। করোনার আতঙ্কের আঁচ লেগেছে শেয়ারবাজারেও। গোটা বিশ্বের শেয়ারবাজারেই চলছে আতঙ্কের তাণ্ডব৷ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এসএন্ডপি ফাইভ হান্ড্রেড পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের মূলধন হারিয়েছে৷ সূচক কমেছে সাত ভাগের বেশি৷ প্রায় একই পরিস্থিতি ছিল ইউরোপ, এশিয়ার প্রধান শেয়ারবাজারগুলোতেও৷ করোনার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসও দরপতনে বড় ভূমিকা রেখেছে ৷ ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দার পর এতটা খারাপ সময় আর আসেনি৷

সাধারণত বিশ্ব পরিস্থিতি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দ্রুত প্রভাব ফেলে না৷ কিন্তু সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেও বড় ধরনের পতন হয়েছে৷ প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭৯ পয়েন্ট বা সাড়ে ছয় ভাগ কমে গেছে, সূচকের রেকর্ড পতনকে অনেকেই ‘সুনামি’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ৷

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৩ সালে নতুন সূচক প্রবর্তনের পর ডিএসইতে এতটা পতন হয়নি এর আগে৷ যদিও মঙ্গলবার সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ সূচক বেড়েছে ১৪৮ পয়েন্ট৷

কেন শেয়ারবাজারের খারাপ অবস্থা
মূলত বাংলাদেশের শেয়ারবাজার গত এক বছর ধরেই খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে৷ সূচকের নিম্নগতি, লেনদেনে স্থবিরতাসহ নানা সংকট পার করছে পুঁজিবাজার। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসই এক্স ১৫৫৪ পয়েন্ট কমেছে৷ এ সময়ের মধ্যে বাজার হারিয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন৷ এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলোর যেসব পূর্বাভাস আসছে তার প্রত্যেকটি নিম্নমুখী৷ স্টক মার্কেটেও তার প্রতিক্রিয়া পড়ছে৷’’

পয়লা এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার নয়ভাগ কার্যকর করতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর মুনাফা এমনিতেই কমে যাচ্ছিল এর ফলে আরো কমে যেতে পারে৷ শেয়ার বাজারে ব্যাংক খাতের অংশ ৪০ ভাগ৷ এর পাশাপাশি গ্রামীণফোনের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েনও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে৷ বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং করোনা ভাইরাসের খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থাহীনতা তৈরি করছে বলেও ধারণা করছেন কেউ কেউ৷ যা বাংলাদেশে কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন এবং পণ্য রপ্তানি দুটোই বাধাগ্রস্থ হবে৷

এখন কি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সময়?
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ২০১৮ সালে ১৪ ভাগ, ২০১৯ সালে ১৭ ভাগের বেশি আর চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত ৬.৬ ভাগ কমেছে৷ অন্যদিকে গত বছর ভারত এবং পাকিস্তানের বাজারে তেজিভাব ছিল, এখন যা পড়তির দিকে৷ অথচ গত দুই বছরে বাংলাদেশের বাজারে একটা বড় ধরনের সংশোধন হয়ে গেছে৷ শেয়ারবাজার এমনিতেই ‘আন্ডারভ্যালুড’ ছিল৷ করোনার প্রভাবে এখন যতটা না হওয়ার কথা তার চেয়েও বেশি আন্ডারভ্যালুড হয়েছে৷

তবে এই পরিস্থিতি বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য এটাই সঠিক সময়৷ কারণ কিছু কিছু স্টকে করোনা এবং সামষ্টিক অর্থনীতির যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো ইতোমধ্যেই প্রতিফলিত হয়ে দর যে পর্যায়ে থাকা উচিত তার চেয়েও নিচে নেমে গেছে৷ ঐ স্টকগুলো যদি কেউ বাছাই করে বিনিয়োগ করে তাদের জন্য বাজারে এখন বিনিয়োগের ভাল সুযোগ।

সাময়িকভাবে বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও কিন্তু শেয়ার বাজারে এসব স্টকের প্রাধান্য বেশি না৷ এর বাইরে ফার্মাসিউটিক্যালস, ম্যানুফ্যাকচারিং ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাতগুলো আগামীতে দিনে ভাল করতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সম্ভাবনাময়৷

সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যে অতিরিক্ত পতন হয়েছে এখন সেটি সংশোধন হওয়ার কথা৷ যার প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার বাজার কিছুটা ঘুরে দাড়িয়েছে৷

ভারত ও পাকিস্তানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সানসেক্স ২০১২-১৩ সালে সূচক ছিল সর্বনিম্ন ১৫৭৪৮ আর সর্বোচ্চ ২০২০৩। ২০১৫-১৬ সালে সূচক দাঁড়ায় ২৫৩৪১ থেকে ২৯০৯৪ পয়েন্টে। ২০১৮ সালে ৩৬৪৪৩ পয়েন্টে। ২০২০ সালে সানসেক্সের সূচক উঠে যায় ৪২২৭৩ পয়েন্টে। পাকিস্তানের কেএসই ইনডেক্স এর দিকে তাকালে দেখা যাবে ১৯৯৮ সালে ৮৪১.৭ থেকে ২০১৭'র মে মাসে সূচক দাঁড়ায় ৫০৫৯১.৬ পয়েন্টে। যা কেএসই'র ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এদিকে বাংলাদেশের ডিএসই সূচক কেমন ছিল ২০১৭ সালে? মূলত ২০১০ সালের উত্থানের পর ধ্বস থেকে নাজুক এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডিএসইএক্স সূচক ২০১৩ সালে ৪০৫৫.৯১ পয়েন্ট থেকে ৪২৬৬.৫৫ পয়েন্ট। আর ২০১৭ সালে এসে ৫০৩৫ পয়েন্ট থেকে ৬৩৩৬ পয়েন্ট এসে দাঁড়ায়। আবার গত দুই বছরে সূচক হারায় ২৩০০ পয়েন্ট। এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যেখানে ভারত আর পাকিস্তানে বিগত বছরগুলোতে পুঁজিবাজার আকাশচুম্বি অবস্থান নেয়। অথচ বাংলাদেশ প্রতিটি সূচকে পাকিস্তান এবং ভারত থেকে এগিয়ে থাকলেও পুঁজিবাজার তলানীতে অবস্থান করছে।
তলানীতে থাকা শেয়ারবাজারে আবার বৈশ্বিক মন্দা এবং করোনা আতঙ্কের হুজুগে গত সোমবার রেকর্ড পতন ঘটে। অনেকটা 'একে তো নাচুনে বুড়ি তার উপর ঢোলের বারির' মতো অবস্থা।
ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় তহবিল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। একাধিক প্রক্রিয়ায় সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ঘোষণার পরও সূচকের পতনকে অস্বাভাবিক মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারে আস্থার সংকট দূর করতে হবে। তবে সব পরিসংখ্যান হিসেব করে দেখলে দেখা যায়, সঠিক স্টক বাছাই করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করলে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদোপরি ভারত পাকিস্তান এবং এশিয়ার স্টক মার্কেট বিশ্লেষন করে দেখা যায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট সময়।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়