এই অবস্থায় গুজবে কান দিয়ে লেনদেন না করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নে সব স্টেকহোল্ডাররা কাজ করছেন বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল লেনদেনের শুরুতেই ডিএসইর মূল্যসূচক ডিএসইএক্সে বড় পতন ঘটে। লেনদেনের মাত্র ১১ মিনিটেই কমে যায় ২০৯ পয়েন্ট। তবে দিন শেষে ১৬১ পয়েন্ট কমে দাড়িঁয়েছে ৩৯৬৯ পয়েন্টে। যা প্রায় ৪ বছর সাড়ে ১০ মাস বা ২০১৫ সালের ৫ মে’র মধ্যে সর্বনিম্ন। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩১ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৪৮ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি সূচকটি ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯২৬, ১৩৩৩ ও ৭৮৯ পয়েন্টে।
এদিকে গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন ১০ হাজার ২৪৮ কোটি ৮৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১১৩ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা। যা বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৩৬২ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকায়।
ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কম।
আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার। ডিএসইতে গতকাল ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির বা ২.৮২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩৩৮টির বা ৯৫.২১ শতাংশের এবং ৭টি বা ১.৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকার গ্রামীণফোন এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার। এছাড়া ডিএসইতে টপটেন লেনদেন থাকা অপর কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্কয়ার ফার্মা, বিএটিবিসি, সামিট পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক ও ন্যাশনাল টিউবস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৪৮৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৫৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১২টির, কমেছে ২৩৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির দর। গতকাল সিএসইতে ২৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে শেয়ারবাজারের লেনদেন সাময়কি বন্ধ করা হবে বলে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন উঠে। তবে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ লেনদেন বন্ধ করার বিষয়টি ভাবছে না। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, তারা এই মুহূর্তে লেনদেন বন্ধ করার কথা ভাবছে না। বরং চলমান মন্দাবস্থা কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করছেন। সম্প্রতি শেয়ারবাজারের ধস সামলাতে আমেরিক, ভারত ও পাকিস্তানে সাময়িক লেনদেন বন্ধ করার মতো ঘটনা ঘটেছে।
ডিএসইতে ১০ খাতের সব শেয়ারে ধস: গতকাল বড় পতনে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৫৫টি কোম্পানির মধ্যে ৩৩৮টির দর পতন হয়েছে। এই ধসে ডিএসইর ১৯টি খাতের মধ্যে ১০টি খাতে শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।
শতভাগ পতন হওয়া খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিমেন্ট, খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, তথ্য ও প্রযুক্তি, বিবিধ, পেপার অ্যান্ড প্রিন্টিং, ঔষধ, সেবা ও আবাসন, ট্যানারি এবং টেলিকমিউনিকেশন খাত।
ব্লক মার্কেট: গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ১৯ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর ১ কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার ৩৬১টি শেয়ার ১১ বার হাত বদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ১৯ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৪ কোটি ৫৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৮২ হাজার টাকার বিকন ফার্মার এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের। এছাড়া ফরচুন সুজ, লাফার্জহোলসিম, নর্দার্ন জুট, এসকে ট্রিমস, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ও ভিএফএস থ্রেডের শেয়ার ব্লকে লেনদেন হয়েছে।