সোমবার (১৯ এপ্রিল) কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
এসময় কৃষক-কৃষাণীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা- এটা আমাদের কর্তব্য মনে করি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের কৃষিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্গাচাষীরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি। আমরা চাই, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সাথে সাথে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি। কারণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রফতানি করতে পারি তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করল এবং এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল এবং যাদের গুলিতে সার চাইতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হলো- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে দিচ্ছি এবং সেখানে আমরা ৭০ শতাংশের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি, যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহসহ প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেই সাথে সাথে আমরা সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করেন সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে সোলার-প্যানেল ব্যাবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ফসলের ন্যায্য মূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য আমরা যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যের কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাটাও এর সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে সমস্ত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং আমরা সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারেও যেমন ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তারাও সে ধরনের সহযোগিতা পাবেন-তার জন্য একটা থোক বরাদ্দ আমরা রেখে দিচ্ছি। আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সর্ব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যাবহার করবেন, কতটুকু ব্যাবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যাবহার করবেন কি-না বা কতটুকু করবেন সব পরিমাণ যাতে পেতে পারে সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে তথ্যকেন্দ্র সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সকলের হাতে হাতে তুলে দিয়েছি।
তিনি বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে, গার্গল করা, ভাপ নেওয়া, যেখানে বেশি জনসমাগম সেখানে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং আমরা যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো দিয়েছি- অবশ্যই সে নির্দেশনাগুলো মেনে নিয়ে নিজেকে আপনারা সুরক্ষিত রাখুন, অপরকে সুরক্ষিত করুন এবং এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়- তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সবাই দোয়া করুন- বাংলাদেশ এই মহাদুর্যোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পেতে পারে।