এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র ২৬ এপ্রিল জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়, চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারের কৃচ্ছ সাধন নীতির আলোকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন কোনো পূর্তকাজ তথা নির্মাণ বা স্থাপনার কার্যাদেশ প্রদান করা যাবে না। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় এ পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে।
এছাড়া সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নতুন গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র গত ৩ ডিসেম্বর জারি করে অর্থ বিভাগ। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় যানবাহন ক্রয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে গত ৮ জুলাই একটি পরিপত্র জারি করেছিল অর্থ বিভাগ।
এদিকে গত ৮ জুলাই অন্য এক পরিপত্রে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নিম্ন অগ্রাধিকার বা কম গুরুত্বপূর্ণ এবং মধ্যম অগ্রাধিকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ বন্ধের নির্দেশ দেয় অর্থ বিভাগ। ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যয় না করলেই নয়, এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে ‘কঠোর’ বিবেচনায় নিতে বলা হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখতে বলা হয়।
পরিপত্রে অর্থ বিভাগ বলে, সীমিত সম্পদের ব্যয়সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের ‘উচ্চ’, ‘মধ্যম’ ও ‘নিম্ন’ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তা হচ্ছে মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থাগুলো উচ্চ অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পগুলো যথানিয়মে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।
মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে; মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থা স্বীয় বিবেচনায় সেসব খাতে অর্থ ব্যয় করবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় পরিহার করা সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে। এছাড়া নিম্ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে।
তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো এ পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে। প্রকল্পের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৮-সহ বিদ্যমান আর্থিক বিধিবিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। তবে পরবর্তী সময়ে অর্থ বিভাগ এখান থেকে সরে এসে সব ধরনের প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ খরচের অনুমতি দেয়। কিন্তু সে অনুযায়ীও অর্থ খরচ করতে পারেনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এছাড়া চলতি বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণ ভাতাও প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর সংশোধিত বাজেটে এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ২৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কিন্তু এক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন হার ভালো নয় এবার। গত মার্চ পর্যন্ত এডিপি থেকে ব্যয় হয়েছে ৮৭ হাজার ৭৩৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে অর্থবছরের নয় মাসে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে সরকার। জানা গেছে, নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন পাঁচ বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকার রাজস্ব আয় হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আহরণ করেছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের এ পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা কম।