অভিবাসীদের বহনকারী বিমানটি ৪ মে লিবিয়ার বেনগাজী শহর থেকে ছেড়ে আসে এবং পরদিন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রত্যাবাসীদের মধ্যে ১৫৯ জন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারী এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এই অভিবাসীরা লিবিয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে আইওএম লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে সমন্বয় করে এই অভিবাসীদের নিরাপদে দেশে ফিরতে সহায়তা করে। লিবিয়ায় মারা যাওয়া একজন বাংলাদেশীর মরদেহও এই বিমানের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
লিবিয়া প্রস্থানের আগে প্রত্যাবর্তনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কাউন্সেলিং পরিসেবা, যাতায়াত, স্ক্রিনিংসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয় আইওএম। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সমস্ত প্রত্যাবর্তনকারীকে ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) দেয়া হয় এবং প্রস্থানের আগে কোভিড-১৯ পরীক্ষা (পিসিআর) করা হয়।
ঢাকায় সরকারী কর্মকর্তা এবং আইওএম বাংলাদেশের কর্মীরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসীদের গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফিরতে প্র্রত্যেক প্রত্যাবাসীকে আর্থিক সহযোগিতাও দেয় আইওএম।
এছাড়া ফিরে আসা প্রত্যেককে আর্থিক ও সামাজিকভাবে সহযোগিতা করবে আইওএম, যাতে করে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এই সহযোগিতা ফিরে আসা আভিবাসীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যারা শারীরিক এবং মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন।
ফিরে আসা একজন অভিবাসী বলেছেন, “লিবিয়ায় জীবন অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল, কারণ সেখানে প্রতিকূলতা অব্যাহত ছিল। আমি পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে না পারায় দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওখানে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আইওএম এবং বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। অনেক বছর পর আমার পরিবারকে দেখতে পাব বলে খুবই আনন্দিত আমি।”
আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, “বাংলাদেশি অভিবাসীরা লিবিয়ায় অসহায় অবস্থায় ছিলেন। কোভিড -১৯ তাদের বিপদাপন্নতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এই অভিবাসীদের নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণ উপায় ফিরয়ে আনা এবং তাদের পুনরেকত্রীকরণে সহযোগিতা করা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। এটি করার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। সরকারের চলমান প্রচেষ্টার জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। "
আইওএম-এর স্বেচ্ছায় মানবিক প্রত্যাবর্তন (ভিএইচআর) প্রোগ্রাম আটকা পড়া বা আটকে থাকা অভিবাসীদের, বিশেষত দ্বন্দ্ব-সংঘাতগ্রস্থ দেশগুলির জন্য জীবন রক্ষাকারী। ২০১৫ সাল থেকে মোট ২,৯৯২ জন বাংলাদেশী এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন।
ভিএইচআর উদ্যোগটি অধিকার-ভিত্তিক এবং উন্নয়ন-কেন্দ্রিক নীতি এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ, নিয়মিত এবং দায়িত্বশীল অভিবাসন নিশ্চিত করে। এই উদ্যোগটির প্রয়োজনীয়তা আরো বিস্তৃত হয় যখন ২০২০ সালে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে আক্রমেনের শিকার হয়ে ৩০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন।