আজ ৮ মে, বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা দিবস। শুক্রবার (৭ মে) এ উপলক্ষে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথভাবে এক ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব থ্যালাসেমিয়া ও রোটারি ক্লাব অব তুরাগ উত্তরা। এই ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটি একটি বংশগত রক্তের রোগ। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে। বাবা অথবা মা, অথবা বাবা- মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। এই রোগ কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। জিনগত ত্রুটির কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ লোক থ্যালাসেমিয়া রোগের জিন বহন করছে এবং প্রায় ৪ শতাংশ লোক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত।
তিনি আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়ার বংশানুক্রমিক বংশ বিস্তার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলেই এই রোগ পরিপূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাবা অথবা মা এর যেকোন একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শতকরা ৫০ ভাগ এবং সম্পূর্ণ সুস্থ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শতকরা ৫০ ভাগ। যদি বাবা এবং মা দুইজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয় তবে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা শতকরা ২৫ ভাগ, থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শতকরা ৫০ ভাগ এবং সন্তান পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে জন্মগ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ।
এছাড়াও তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা ও এই রোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এটি ভবিষ্যতে মহামারী আকার ধারণ করবে বিবেচনা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দিয়েছেন ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার। সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
ল্যাব ওয়ান গ্রুপের প্রোগ্রাম অফিসার বাপ্পী ভেীমিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১, বাংলাদেশের গভর্নর (নমিনী) ইঞ্জিনিয়ার এম এ ওয়াহাব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব থ্যালাসেমিয়ার সহ-সভাপতি ডা: জিনাত আরা।
অনলাইন অতিথি ছিলেন ক্যানসাস ডেমক্রেটিক পার্টির এশিয়ান প্যাসিফিক আইসল্যান্ডার কোকাসের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান রেহান রেজা, থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টসের সদস্য জর্জ কনস্টানটিনো, ইংল্যান্ডের এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের হেমাটোলজি এন্ড বিএমটি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: আমিন ইসলাম।
এতে আরো বক্তব্য দেন রোটারি ইন্টারন্যাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১, বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী গভর্নর রোটারিয়ান এম খায়রুল আলম, খুলনা মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: লিয়াকত হোসেন তপন, রোটারী ক্লাব অব তুরাগ উত্তরার প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান মোঃ মতিউর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারির পরিচালক ডা: মো: শফিউর রহমান।
এম এ ওয়াহাব বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা নিয়মিত নিতে হয়। এসব রোগীকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব থ্যালাসেমিয়া। তিনি ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের পাশে থাকার জন্য সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
রেহান রেজা বলেন, সঠিক যথার্থ জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে এই রোগ প্রায় পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব। সুতরাং জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়ায় যারা আক্রান্ত আছে তাদের স্বল্পমূল্যে যাতে চিকিৎসা সেব নিশ্চিত করা যায় সেজন্য থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সহায়তার জন্য একটি কল্যাণ তহবিল করার আহবান জানান।
থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন এর বোর্ড অব ডিরেক্টরসের মেম্বার মি. জর্জ কনস্টানটিনো বলেন, ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব থ্যালাসেমিয়া এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের পাশে থেকে যেভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে তা খুবই প্রসংশনীয়। এ মহৎ উদ্যোগের সাথে আমি সবসময় থাকবো।
ডা: আমিন ইসলাম বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগটি বংশগত হলেও এটা রোধ করা সম্ভব। এই রোগ সম্পর্কে বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অবগত করতে পারি। তাছাড়া থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করে বেঁচে থাকতে হয়, এজন্য এদের নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছায় রক্তাদানের ব্যাপারেও সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এ সময় রক্ত রোগের চিকিৎসা জন্য তারা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সব সেবা চালু করার জন্য সরকার ও ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশনের প্রতি জোর দাবি জানান।