বুধবার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা জাতীয় সম্মিলিত প্রতীকী শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রীতি উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, 'আমাদের এ দেশ রচিত হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও মুসলমান- সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম মূল কারণ ছিল সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের রচনা। সে জন্যই আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা আছে।' তিনি বলেন, 'ধর্মনিরপেক্ষতার অনেক অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রেও ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে, ইরাক রাষ্ট্রেও ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে।'
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে আমরা বাঙালি। এরপর আমাদের পরিচয় হচ্ছে- আমরা মুসলমান, কেউ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। কিন্তু বাংলাদেশের একটি পক্ষ রয়েছে, যারা তাদের ধর্মীয় পরিচয়কে প্রথম পরিচয় মনে করেন। তাদের দ্বিতীয় পরিচয় বাঙালি না বাংলাদেশি এটা নিয়ে তারা সার্বক্ষণিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। সেখানেই তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।
এছাড়াও তিনি বলেন, 'সব ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। বৌদ্ধ ধর্ম আরো এক ধাপ এগিয়ে সব জীবের কল্যাণের কথা বলেছে। আমরা যদি ধর্মের মর্মবাণী বুকে ধারণ করে সেটা অনুশীলন করি, তাহলে পৃথিবীতে হানাহানি কখনোই থাকত না। তাই আজকের দিনে আমি সবার প্রতি অনুরোধ করব, আমরা যেন ধর্মের মর্মবাণী বুকে ধারণ করে সবার জন্য সাম্য এবং সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করি।
সব ধর্মের মানুষের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, যে চেতনার ভিত্তিতে আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ রচনা করেছিলেন, সেই চেতনার গায়ে কেউ যেন কালিমা লেপন করতে না পারে, সেই চেতনাকে কেউ যেন নস্যাৎ করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায়, সব ধর্ম এবং মতামতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেকগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অপচেষ্টা চালায়, আমাদের সরকার সব সময় সেটা কঠোর হস্তে দমন করেছে। ভবিষ্যতেও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।'
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির মহাসচিব নির্মল চ্যাটার্জি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্টের সহসভাপতি সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি উত্তম কুমার বড়ুয়া, ড. জগন্নাথ বড়ুয়া, অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া প্রমুখ।