সম্প্রতি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির আর্নিংস কল তথা সর্বশেষ বছরের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়।
আর্নিংস কল সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক ব্যাংক জানায়, ২০২০ এর প্রথম ছয় মাস কোভিড-১৯-এর প্রকোপ সামলে বাকি অর্ধবছর স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক খাতের পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বছর শেষ করে ২০২১ সালের প্রথম তিন মাস বেশ গোছানো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা প্রথম দেশগুলোর একটি হিসেবে দেশব্যাপী অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকাদান কর্মসূচী চালু করে বাংলাদেশ।
২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংক। বেশ আগে থেকেই স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করায়, এবং ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকিং পরিষেবা অব্যাহত রেখে ও ডিজিটাল গ্রাহক পরিষেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সফলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয় ব্র্যাক ব্যাংক। এর ফলে কঠিন সময়ের মাঝেও গ্রাহকসেবা অব্যাহত রাখতে এবং মহামারির প্রকোপ মোকাবেলা করে প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি।
তবে এপ্রিল ২০২১ থেকে কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ হার বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে পুনরায় লকডাউন ও ঘরে থেকে কাজের চর্চা শুরু হয়, যা কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ।
- একক ভিত্তিতে বছর প্রতি ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১৪১ কোটি টাকা এবং সমন্বিত ভিত্তিতে বছর প্রতি ৪৪% প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১০৯ কোটি টাকার কর পরবর্তী নেট মুনাফা (এনপিএটি) নিবন্ধন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
- শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল একক ভিত্তিতে ১.০৬ টাকা এবং সমন্বিত ভিত্তিতে ০.৯৩ টাকা।
- গ্রাহক আমানত বছর প্রতি বেড়েছে ৪ শতাংশ এবং আমানত মিশ্রণ (কাসা) ৪৩ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশে উন্নত হয়েছে যা সফল আমানত ব্যবস্থাপনা এবং সুদের হার পরিচালনার কৌশলকে প্রতিফলিত করে।
- মহামারি চলাকালীন বেশ সতর্কতা অবলম্বন করায় বছর প্রতি গ্রাহক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৪ শতাংশ। এসএমই ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিলো ১৮ শতাংশ; প্রথম প্রান্তিকে রিটেইল ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও কর্পোরেট ও কমার্শিয়াল ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অব্যাহত রাখে ব্র্যাক ব্যাংক।
- ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের হার সংকোচনের প্রভাব পুরো ব্যাংকিং শিল্পে অব্যাহত ছিল। তবুও, উন্নত আমানতের ব্যয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৪.৮ শতাংশ স্প্রেড নিয়ে প্রথম প্রান্তিক শেষ করে ব্র্যাক ব্যাংক।
- ব্যাংকের শক্তিশালী ট্রেজারি বিভাগের দৃঢ়তার মাধ্যমে গ্রাহক ঋণ প্রদানে সতর্কতা ও ঋণ দেওয়ায় হারের হ্রাসকৃত সীমায়নের ফলে কমে যাওয়া সুদের আয় পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় ব্র্যাক ব্যাংক। সরকারি সিকিউরিটিজ থেকে বিনিয়োগের আয় প্রথম প্রান্তিকের সময়কালে বছর প্রতি হিসেবে দ্বিগুণে উন্নীত হয়।
- ব্র্যাক ব্যাংকের একক খরচ-উপার্জনের অনুপাত (সিআইআর) প্রথম প্রান্তিক শেষে বছর প্রতি হিসেবে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়, সমন্বিত হিসেবে সিআইআর বছর প্রতি ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ শতাংশ।
- প্রথম প্রান্তিকে রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেটস (আরওএ) ছিলোঃ
০২) সমন্বিত ভিত্তিতেঃ আরওই ১০.২২ শতাংশ, আরওএ ১.০৯ শতাংশ
- প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) অনুপাত ছিলো ৪.৪ শতাংশ, যা বছর প্রতি হিসেবে ০.৬ শতাংশ বেশি। মহামারি থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ব্যাংকের এনপিএল কভারেজ অনুপাত ১১৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের ব্যাংকিং শিল্পে এটি অন্যতম উচ্চ এনপিএল কভারেজ অনুপাত।
- ২০২১-এর প্রথম প্রান্তিক শেষে সমন্বিত মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) রিপোর্ট করা হয়েছে ১৫.১২ শতাংশ যার ৯৫ শতাংশই ছিল টিয়ার-১ মূলধন, দেশের ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ। ব্যাংকের একক ভিত্তিতে মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ছিলো ১৪.৫৬ শতাংশ, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্দশিত ১২.৫ শতাংশ থেকে বেশ ওপরে।
- মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সমন্বিত ভিত্তিতে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ছিলো ৩৬.২৪ টাকা এবং একক ভিত্তিতে ছিলো ৩৫.০৪ টাকা।
ভার্চুয়াল এই বার্ষিক পারফরম্যান্স উপস্থাপন অনুষ্ঠানে স্থানীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগ বিশ্লেষক, পোর্টফোলিও ম্যানেজার এবং মূলধন বাজার বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। বিদেশী স্টেকহোল্ডারদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন, ডিএমডি অ্যান্ড চীফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার এম মাসুদ রানা, ডিএমডি অ্যান্ড চিফ অপারেটিং অফিসার সাব্বির হোসেন, ডিএমডি অ্যান্ড হেড অফ কর্পোরেট ব্যাংকিং তারেক রেফাত উল্লাহ খানসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন বিজনেস প্রধানরা ব্যাংকের আর্থিক ফলাফল ও ব্যাংকের কৌশল রূপরেখা উপস্থাপন করেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।