তিনি বলেন, এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।
এরপর পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। প্রতি বছর খুব উৎসাহের সঙ্গে বাংলাদেশীরা দিনটিকে পালন করে। কিন্তু ৪৯তম বার্ষিকী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণ ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উদযাপনের আগের বছরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এবার স্বাধীনতা দিবস নতুন আবহ নিয়ে আসায় প্রস্তুতিও ছিল অনেক।
কিন্তু মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থগিতের পর কভিড-১৯ রোগের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে রাখার মধ্যেই এবারের স্বাধীনতা দিবস এল।
দিনটির প্রাক্কালে বুধবার জাতীয় উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনসমাগম হয়, এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
স্বাধীন বাংলাদেশে এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান এমন কাটছাঁট করতে হল।
সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানানোর যে কর্মসূচি হয়, সেটা এবার হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শিশু কিশোর সমাবেশ কিংবা প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজও হচ্ছে না। বাতিল করা হয়েঠেছ বঙ্গভবনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও।
২৩ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, চলেছিল গণহত্যা।
এই আক্রমণ বাংলাদেশের প্রতিরোধ যুদ্ধের পথ তৈরি করে দেয়; পাকিস্তানের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করে দেন, বাংলাদেশ এখন স্বাধীন।
পাকিস্তানিরা বন্দি করলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম, মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় নয় মাসের সশস্ত্র সেই সংগ্রামে আসে বিজয়।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আরও অনেক দূর যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করাই হোক মুজিববর্ষে সকলের অঙ্গীকার।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ২৬ মার্চ আমাদের জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি…বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান।