রিং শাইনের শেয়ারে ব্যাপক জালিয়াতি

রিং শাইনের শেয়ারে ব্যাপক জালিয়াতি
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুল আলোচিত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক শেয়ার জালিয়াতির তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি'র এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, যারা জালিয়াতি করেছে তাদের নাম তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট তালিকা এসেছে। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বন্ধ কোম্পানিগুলোকে সচল করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। এরপর কোম্পানিটির প্রকৃত অবস্থা জানতে বিশেষ অডিটের উদ্যোগ নেয় এবং তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। ওই বিশেষ অডিট ও তদন্তে রিং শাইন টেক্সটাইলে এই জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

এছাড়া জানা গেছে, ২০১৯ সালে আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রি করতে যে প্রসপেক্টাস প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে এ কোম্পানির ৯ উদ্যোক্তা-পরিচালক নিজেদের সিংঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান এবং ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তালিকাভুক্তির বছরই এদের অধিকাংশই দেশ ছেড়ে চলে যান। এরপর কোম্পানিটির উৎপাদন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে নতুন নেতৃত্ব আসার পর তারা রুগ্ন ও বন্ধ কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেয়।

এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত জানুয়ারিতে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মেজবাহ উদ্দিনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে বিশেষ অডিট ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালন করে। ওই তদন্তেই রিং শাইনের শেয়ার জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।

এ বিষয়ে আরও জানা গেছে, শেয়ার বিক্রি করে বাংলাদেশ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে কোম্পানির অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না দিয়েই ১৬১ কোটি টাকার মূল্যের ১৬ কোটি ১০ লাখ শেয়ার নিজেদের নামে নিয়েছিলেন তারা।

আইপিওতে আসার দুই বছর আগে ২০১৭ সালে ৯ বিদেশি উদ্যোক্তার নামে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের মাত্র ৩১ লাখ শেয়ার ছিল। যার প্রকৃত মূল্য ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।

আইপিওতে আসার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালেই এই ৯ পরিচালক আরও ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ২২০টি শেয়ার নতুন করে নগদ টাকায় নিয়েছেন বলে আইপিও প্রসপেক্টাসে তথ্য দেন।

কিন্তু কমিশনের তদন্তে দেখা গেছে, তারা প্রকৃতপক্ষে এ শেয়ার কিনতে কোনো টাকাই কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা দেননি। এমনকি তালিকাভুক্তির পর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার তিন বছরের লকইন (শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা) থাকায় নির্বিঘ্নে কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান ইউনির্ভাসাল নিটিং এবং লার্ক টেক্সটাইলের নামেও ২৪ কোটি টাকায় শেয়ার নেন। এক্ষেত্রেও কোনো টাকা পরিশোধ হয়নি। শুধু উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানই নয়, এর বাইরে অন্তত ৩৩ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও টাকা ছাড়া প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার নিয়েছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানিয়েছে, বিনা টাকায় যারা জালিয়াতি করে শেয়ার নিয়েছেন, তাদের সব শেয়ারই বাতিল করা হবে।

এদিকে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, শেয়ার বাতিল হলে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমবে। একই সঙ্গে এই শেয়ারের বিপরীতে পাওয়া মূলধন হালাল করতে ভুয়া সম্পদ মূল্য দেখানো হয়েছে। শেয়ার বাতিল হলে ওই সম্পদের হিসাবও বাতিল হবে। তাতে কোম্পানির সম্পদ মূল্যও (এনএভি) কমে যাবে।

আইপিওতে আসার আগের বছরে ৭৩ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ১১৪ কোটি টাকার প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি দেখিয়েছে কোম্পানিটি।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএসইসি জানিয়েছে, আইপিওতে আসার আগের বছর কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ২৮৫ কোটি ০৫ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এর মধ্যে সকল উদ্যোক্তা এবং ৩৩ বাংলাদেশি টাকা ছাড়াই জালিয়াতি করে শেয়ার নিয়েছেন। তবে তার মোট পরিমাণ কত, তা জানায়নি সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, ২০১৮ সালে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রি দেখিয়ে ২৭৫ কোটি ০৫ লাখ টাকার মূলধন বাড়ায়। এক্ষেত্রে ১১ উদ্যোক্তা-পরিচালক (প্রকৃতপক্ষে ৯ উদ্যোক্তা এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠান) এবং ৭৩ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রি দেখানো হয়।

কিন্তু ১১ উদ্যোক্তা এবং ৩৩ বাংলাদেশি শেয়ারহোল্ডার এই শেয়ার নিতে নগদ মূল্য পরিশোধ করেছেন বলে আইপিও প্রসপেক্টাসে তথ্য দিয়েছেন। আসলে তারা কোনো টাকাই পরিশোধ করেননি।

শেয়ার জালিয়াতির এ তথ্য গত ২০ মে প্রথম প্রকাশ করেছিল বিএসইসি। ওইদিনও সংস্থাটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, কমিশন সভায় আইপিও পূর্ব শেয়ারের মধ্যে টাকা ছাড়াই যতগুলো শেয়ার ইস্যু করা হয়েছিল, তার সবটাই বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আইপিওতে আসার আগের বছরে ৭৩ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ১১৪ কোটি টাকার প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি দেখানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, এর মধ্যে ৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই জালিয়াতি করে শেয়ার নিয়েছেন।

আইপিওর আগে রিং শাইন টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ছিল ২৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানের অংশ ছিল ১৭১ কোটি টাকা।

আইপিও প্রক্রিয়ায় ১৫০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত হলে এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩৫ কোটি টাকা।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত