মহামারীর বিপজ্জনক এই রূপ দেখে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলার নীতিমালায় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস।
তিনি বুধবার জেনিভায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, এটা এখনও আমাদের কাছে নতুন একটি ভাইরাস এবং আমরা শিখছি প্রতিনিয়ত। যেহেতু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন তথ্য আসছে, তাতে আমাদের পরামর্শও পরামর্শও বদলাবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইতোমধ্যে বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের চলতি প্রাদুর্ভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয়ে এসেছে।
তিন মাস আগে চীনের উহানে প্রথম সংক্রমণ ঘটার পর ইউরোপকে বিপর্যস্ত করে এখন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাস মহামারীর নতুন কেন্দ্র।
গত ১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে হাতেগোনা কয়েকজন হলেও এক মাসের ব্যবধানে এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ।
সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার নাগাদ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৩৩৬ জন, আর মৃতের সংখ্যা সাড়ে চারশ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৫৪।
কোভিড-১৯ মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে এক থেকে আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন গবেষকরা; আর এই পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, সামনে খুব কষ্টের সময় আসছে।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুসারে, সব মিলিয়ে বুধবার নাগাদ বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে ৯ লাখ ১১ হাজার ৩০৮ জনের দেহে সংক্রমিত হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস, আর এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৪৯৪। এই পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৭১০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ হাজারের বেশি আর মৃত্যু বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজারের মতো।
ইউরোপের সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ ইতালি ও স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর ইতালি ও স্পেন দুই দেশেই আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়েছে। ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৭৪ জন, আর স্পেনে ১ লাখ ২ হাজার ১৩৬ জন।
স্পেনে আবারও একদিনে রেকর্ড ৮৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৩। বিশ্বে মৃতের সংখ্যায় এখনও শীর্ষে রয়েছে ইতালি ১৩ হাজার ১৫৫ জন নিয়ে।
স্পেন এবং ইতালিতে তিন-চতুর্থাংশের বেশি মানুষের মৃত্যু নিয়ে গোটা ইউরোপে মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চার লাখ ৫৮ হাজার ৬০১ জনের মধ্যে মারা গেছে মোট ৩০ হাজার ৬৩ জন।
জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৭৬ হাজার ৫৪৪ জন হলেও মৃতের সংখ্যা এখনও এক হাজারের নিচে (৮৫৮ জন) রয়েছে। ফ্রান্সে ৫২ হাজার ৮৭০ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৫২৩ জনের।
যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩০০ হাজার ছুঁইছুঁই করছে, মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৫২ জন।
করোনাভাইরাসের উৎসভূমি চীনে আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য বেড়ে ৮২ হাজার ৩৬১ জন হয়েছে; মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩১২ জনে।
চীন, ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৫৯৩ জন, মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১ হাজার ৮৩৪ জনে। এর মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১।
এ্ই অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও সর্বোচ্চ পাকিস্তানে ২ হাজার ২৩৮ জন। দেশটিতে মারা গেছে ৩১ জন।