পানিতে ডুবে মৃত্যু ঠেকাতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়েছিল।
গত বছরের (২০২০) ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১৯ মাসে এক হাজার ৫৬ শিশুসহ মোট এক হাজার ৫৬২ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই শিশু।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত থেকে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টির তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। শনিবার (২৫ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সমষ্টি।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর জাতীয়ভাবে কার্যকর তথ্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ ঘটনাই গণমাধ্যমে উঠে আসে না। ফলে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় না। পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে জাতীয়ভাবে সর্বশেষ জরিপটি হয়েছে ২০১৬ সালে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ওই জরিপে তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতিবছর সব বয়সী প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু।
এই জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুরা পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন, অর্থাৎ বছরে প্রায় ১০ হাজার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া।
১৯ মাসে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম জেলায়, বিভাগের মধ্যে মৃত্যুতে এগিয়ে চট্টগ্রাম। কুড়িগ্রামে অন্তত ৬৩ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। নিহতদের ৪৫ জনের বয়স নয় বছরের কম। পারিবারিক সদস্যদের অগোচরে এসব শিশুরা পানির সংস্পর্শে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। নিহতদের মধ্যে ২৬ জন নারী ও কন্যা শিশু এবং ৩৭ জন পুরুষ ও ছেলে শিশু। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৮ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়।
অন্যদিকে ৮ বিভাগের মধ্যে গত ১৯ মাসে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে চট্টগ্রাম বিভাগে। এ সময়ে এ বিভাগের সবগুলো জেলায় অন্তত ২৭১ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২৮টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ঢাকা বিভাগে।