শনিবার (৭ আগস্ট) ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই পর্যালোচনা তুলে ধরে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
তবে সংস্থাটি মনে করছে, নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি গত ছয় মাসে মোটামুটি সঠিক পথেই পরিচালিত হয়েছে। একই সঙ্গে এই বিরূপ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২৬ ও ২০৪১ সালের প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। ওই প্রবন্ধে তিনি অর্থনীতিতে কোভিডের প্রভাব, এলডিসি–উত্তর সময়ে দেশের অর্থনীতির পর্যালোচনা, মুদ্রানীতি, মাইক্রো অর্থনীতি, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং সার্ভিস খাত প্রভৃতির ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। তবে অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথভাবে কাজ করা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণকে করোনা মহামারি থেকে সুরক্ষা দিতে টিকা প্রদান গ্রামীণ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কর, শুল্কসহ অন্যান্য নীতিতে সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, কোভিড মহামারির নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি গত ছয় মাসে মোটামুটি ঠিক পথেই পরিচালিত হচ্ছে এবং ২০২৬ ও ২০৪১ সালের প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে।
রিজওয়ান রাহমান আরও বলেন, মহামারির কারণে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৩৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৩৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে, দারিদ্র্য ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং ইতিমধ্যে প্রায় ২২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের আমাদের রপ্তানি প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা চলমান রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, শুল্ক ও ভ্যাট–ব্যবস্থায় সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণ, স্থানীয় ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে এডিআর ব্যবস্থার ব্যবহার বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা সহায়তা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি কোভিড মহামারি ও এলডিসি–উত্তর সময়ে জন্য সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন খুবই জরুরি।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, তবে ২০২১ সালে তা ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
বিনায়ক সেন বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ অর্থনীতির অন্যান্য খাতে হালনাগাদ তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে নীতিমালা প্রণয়নে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এটি নিরসনে অর্থনীতির সব স্তরের সমন্বিত তথ্যপ্রাপ্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সমাজের অনেক মানুষ নতুনভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসতে পারে, যা মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিকট কীভাবে পৌঁছানো যায়, তার প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।