সরকারি ছুটি বাড়ানোর পাশাপাশি সড়ক-রেলওয়ে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্ধ রয়েছে দেশের সব সুপার মার্কেট-মার্কেট। মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তের অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সরকারি প্রশাসনকে সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে দেশজুড়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
দেশের ৬২টি জেলায় সেনাবাহিনীর ৫৪৬ টি দল টহলের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা, জনসমাগমের পয়েন্টগুলোতে মাইকিংসহ জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা বা বিভাগীয় শহরে কোন ক্যাম্প স্থাপন না করে প্রতিটি এলাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকেই ছুটছেন সেনা সদস্যরা।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সীমিত যান চলাচলের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাইকমান্ড নিজেদের আর্মি এভিয়েশন গ্রুপকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাচ্ছে।
দুর্যোগকালীন সময়ে সড়কপথ ব্যবহার না করে প্রতিটি জেলার সেনাবাহিনীর টিমের জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জামাদি পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এভিয়েশন গ্রুপের একাধিক হেলিকপ্টার ও কাসা বিমান।
দিন দিন আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যের ওপর নির্ভরতাও কমিয়ে আনছে সেনাবাহিনী। উদ্ভুত পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকেই দেশের প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টের সামরিক হাসপাতালসমূহকেও (সিএমএইচ) প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আবার প্রতিটি জেলাতেই মেডিকেল সহায়তার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সাভার, কুমিল্লা, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি ওষুধও বিতরণ করছেন সেনা সদস্যরা। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।
ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত রূপ পাল্টানোয় প্রবীণদের পাশাপাশি তরুণ ও কিশোররাও ঝুঁকিতে রয়েছে, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ জন। ২৪ ঘন্টায় ৫১৩ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নতুন করে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ১৪ জনকে।
প্রতি মুহুর্তে রূপ বদল করছে ভয়ঙ্কর এ ছোঁয়াচে রোগ। ফলে দেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১১ দিন আগে থেকেই সরকারের নির্দেশে জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে মাঠে নামে সেনাবাহিনী।
করোনার প্রভাব ঠেকাতে সবাইকে ঘরবন্দি থাকতে উৎসাহিত করতে সেই থেকেই দেশের প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলো চষে বেড়াচ্ছেন সেনা সদস্যরা। তারা নিজেরা সড়কে সড়কে ও যানবাহনে জীবাণু নাশক ছিটিয়ে মানুষকে নিরাপদ করছেন।
বাজারে বাজারে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারিও করছেন। এতো সব কর্মযজ্ঞ সেনা সদস্যরা করছেন নিজ নিজ জেলার ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করেই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূত্র জানায়, দেশজুড়ে সেনাবাহিনীর সামগ্রিক কর্মকান্ডের বিষয়টি মনিটরিং করছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে কার্যক্রম জোরদার করতে হবে তিনি এ বিষয়েও দায়িত্বশীলদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। আবার প্রতিদিনের কর্মকান্ডের সারসংক্ষেপ পৌঁছে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছেও।
একই সূত্র নিশ্চিত করছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে সড়কে সড়কে শুধুমাত্র সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলের গাড়ি রয়েছে।
এমন অবস্থায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্ব পালন করা সেনা সদস্যদের কাছে কাঙ্খিত মেডিকেল সরঞ্জামাদি পৌঁছে দিতে নিজেদের যান ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয় সেনাবাহিনী।
এক্ষেত্রে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থানরত সেনা সদস্যদের হাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাস্ক, হ্যান্ড-স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন মেডিকেল সরঞ্জামাদি পৌঁছে দিতে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের হেলিকপ্টার ও কাসা বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের হেলিকপ্টার ও কাসা বিমানে এসব সরঞ্জামাদি পৌঁছে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত যুদ্ধে কার্যকর সহায়তা দিচ্ছে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ। মাঠ পর্যায়ে জীবনবাজি রাখা সেনা সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষায় এসব মাস্ক, হ্যান্ড-স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হাতেও তুলে দিচ্ছেন।
আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত শান্তিকালীন সময়ে আর্মি এভিয়েশন সেনা বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন অনুশীলন ও মহড়ায় অংশহণ, জরুরী চিকিৎসার জন্য রোগী স্থানান্তর, সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে জরুরি প্রয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।
এসব কর্মকান্ডের পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সময়ে আকাশ পর্যবেক্ষক হিসেবে গোলা নিয়ন্ত্রণ, জরুরি রিইনফোর্সমেন্ট সহায়তা, কমান্ডো অপারেশনে সহায়তা, জরুরি রশদ সরবরাহ ও যুদ্ধক্ষেত্রে রোগী স্থানান্তরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা রয়েছে ১৯৭৮ সাল থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দর এলাকা থেকে কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসা আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ।
সূত্রটির মতে, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের বিমান বহরে সেসনা-১৫২ এ্যারোব্যাট, সেসনা গ্রান্ড ক্যারাভান সিই-২০৮বি বিমান, বেল-২০৬ এল ৪ হেলিকপ্টার, ইউরোকপ্টার ডফিন এএস ৩৬৫ এন৩+, এমআই ১৭১ এস এইচ হেলিকপ্টার এবং কাসা সি-২৯৫ ডব্লিউ বিমান ও ৪ টি ডায়মন্ড ডিএ৪০এনজি প্রশিক্ষণ বিমান। সম্প্রতি লালমনিরহাটে আর্মি এভিয়েশন স্কুল স্থানান্তরিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ প্রায় সময়েই নিজের বক্তব্যে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের সক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধির বিষয়টি উচ্ছ্বাস নিয়েই উপস্থাপন করেছেন। বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। একদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের অ্যাটাক হেলিকপ্টার হবে। ইতোমধ্যেই সরকার আরও ৬ টি হেলিকপ্টারের অনুমোদন দিয়েছে।’
মাস দেড়েক আগে লালমনিরহাটে আর্মি এভিয়েশন স্কুলের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘চিটাগাং হিল ট্রাকসে আমাদের প্রচুর কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশন পরিচালিত হয়। সেই ক্যাম্পগুলোতে রেশন সাপোর্ট দেওয়া ও অন্যান্য অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সাপোর্ট দেওয়া শুরু করেছে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ।
এক সময় এ কাজগুলো করতে আমরা এয়ার ফোর্সের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন আমাদের এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ ও অন্যান্য অপারেশনাল সাপোর্ট দিচ্ছে।’