এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক এবং শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা।
ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিক সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ শতভাগ বিতরণ করে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। চলতি অর্থবছরের ২০০ কোটি টাকা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিতরণ শেষ করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে কভিড-১৯-এর ক্ষতি কাটিয়ে এসএমই খাত শক্তিশালী হবে। প্রথম দফার ১০০ কোটি টাকা সঠিকভাবে বিতরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রমাণ করেছে, তার সক্ষমতা আছে। সুতরাং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠানকে আরো বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়াসহ অধিক পরিসরে দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো ও আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হলে সরকারের নির্বাচনী লক্ষ্য অনুযায়ী নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে। সত্যিকার অর্থে এসএমই খাতের উন্নয়ন করতে হলে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা এসএমই পল্লী ও তাদের পণ্যের জন্য বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবর্তক সজিব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে আইসিটি খাতে যে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, তার সুবিধা গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে হবে। নতুন উদ্যোক্তা উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন ও আইসিটি বিভাগ একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এসএমই খাত। এ খাতকে এগিয়ে নিতে না পারলে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠন কঠিন হবে। এজন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বিশেষ করে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এ সময় তিনি ২০০ কোটি টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের জন্য অনুরোধ করেন।
করোনাভাইরাস অতিমারী পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এসব খাত ও পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। খাতগুলোয় বিতরণের জন্য মোট আটটি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, যার মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনকে দেয়া হয় ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত অর্থবছরে জন্য বরাদ্দ ছিল ১০০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের জন্য বাকি ২০০ কোটি টাকা গত মাসে ছাড় করে অর্থ বিভাগ।
বরাদ্দকৃত এ অর্থ বিতরণের জন্য বৃহস্পতিবার ১৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে এসএমই ফাউন্ডেশন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেসিক ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারা দেশের প্রায় ১০০টি এসএমই ক্লাস্টার, চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সারা দেশের নারী উদ্যোক্তা ও এসএমই ফাউন্ডেশন,
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ বিতরণ করবে। এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি ও গ্রুপের তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তারা এ ঋণ পাবে। তবে মোট ঋণের ২৫-৩০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা ১ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন।