করোনা মহামারির জন্য পরিবেশ সচেতনতা ও রক্ষায় নানাবিধ কর্মসূচি পালন করতে না পারায় এবার তিনি নিয়েছেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সম্প্রতি তিনি ডিজিটাল মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৈরি করেছেন ‘গো উইথ আশরাফুল আলম’ নামের ইউটিউব চ্যানেল (https://www.youtube.com/ashrafulnoa) এবং ফেসবুক পেইজ (https://www.facebook.com/GowithAshrafulAlam) যেখানে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক ভিডিও আপলোড করে যাচ্ছেন, সেই সাথে পাচ্ছেন বেশ বাহবা। শুধুমাত্র সামাজিক মাধ্যমের বলয়ের মধ্যে না থেকে ‘গো উইথ আশরাফুল আলম’ কে একটি সামাজিক সচেতনতামূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তৈরি করাতে কাজ করে যাচ্ছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে ২০১১ সালে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন আশরাফুল আলম। তখন থেকেই পাঠ্যাপুস্তকের মলাটে নিজেকে বেঁধে না রেখে, যুক্ত করেছেন নানান সামাজিক কার্যক্রমে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি আর্থকেয়ার ক্লাবের সাথে।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি আর্থকেয়ার ক্লাবে যোগ দিয়েই আশরাফুল ২০১২ সালে ধানমন্ডি এলাকায় ময়লা ফেলার বাক্স রাখার উদ্যোগ নেন। আর্থকেয়ার ক্লাবের এমন উদ্যোগ বেশ প্রশংসিত হয় সেসময়। বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা ফেলার বাক্স চোখে পড়ে, আট বছর আগে এমন দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়েনি। ক্লাবের প্রধান সমন্বয়ক এবং অন্যান্য সদস্যের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন আশরাফুল।
ঢাকার রাস্তায় নিত্য যাদের চলাচল, তারা জানেন এখানে শব্দদূষণের ব্যাপকতা। হাসপাতাল কিংবা স্কুলের সামনেই হোক না কেন, খামখেয়ালি আর স্বেচ্ছাচারী চালকদের হাতে পড়ে বিরাম নেই হর্ন যন্ত্রের। ৪৫ ডেসিমেলের ওপর হর্ন বাজানো যাবে না’, ‘স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো যাবে’ না কিংবা ‘প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক হর্ন বাজানো উচিত নয়’— শব্দদূষণ কমাতে প্রতিটি গাড়ির সামনে গিয়ে ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ডে লেখা এ কথাগুলে তুলে ধরেন আর্থকেয়ার ক্লাবের সদস্যরা।
শব্দ দূষণ নিয়ে এই কার্যক্রমটিরও মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আশরাফুল। এছাড়া পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন যেমন বাপা, পবা, সবুজপাতা, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ, বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার ইত্যাদি সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে পরিবেশ সচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, স্কুল-কলেজে পরিবেশ বিষয়ক প্রশ্ন নিয়ে কুইজ অনুষ্ঠান, পরিবেশ বিষয়ক মঞ্চ নাটিকা কিংবা প্ল্যাকার্ড হাতে শব্দদূষণ রোধের জন্য মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে অংশ নিয়েছেন বহুবার।
পণ্য কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় গাছের গায়ে লোহা পিটিয়ে একটি বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে দেয়ার গল্পটা অনেক পুরনো। বিশেষ করে ঢাকার রাস্তায় হরহামেশা এমন দৃশ্য নজরে পড়বে পথচারীদের। ২০১৩ সাল থেকে ধানমন্ডি এলাকার গাছ থেকে এমন কিছু বিজ্ঞাপন খুলে ফেলেছেন সবুজপাতা, বাপা ও আর্থকেয়ার ক্লাবের সদস্যরা। এই আয়োজনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছেন আশরাফুল আলম।
এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সাধারন সদস্য থেকে গনসংযোগ সম্পাদক, কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সবশেষে হয়েছেন ক্লাবের সভাপতি। পেয়েছেন সেরা সেচ্চাসেবকের পুরস্কার। ব্যাক্তি জীবনে ভালোবাসেন ভ্রমণ করতে। সেই ভ্রমণপ্রেম থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন ভ্রমণীয় নামের ঘুরে বেড়ানোর প্ল্যাটফর্ম। এছাড়াও পরিবেশ সচেতনামূলক ভিডিও বানানোর পাশাপাশি ভ্রমণ নিয়েও ভিডিও বানাচ্ছেন।
বর্তমানে আশরাফুল মার্কেটিং কমিউনিকেশান পেশায় কর্মরত আছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অবসর সময়ে তিনি পরিবেশ, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন।