এসময় কুমিল্লায় পূজামন্ডপে দেবীমূর্তি উপর পবিত্র কুরআন রাখার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সংগঠনটির সহকারি প্রচার সম্পাদক আবদুল আজিজ খসরু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কোনভাবেই পবিত্র কুরআনের অবমাননা সহ্য করবে না। এটা দেশের বিরুদ্ধে একটি চক্রান্ত। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে।
তারা আরও বলেন, কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। নেতৃদ্বয় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ধর্মপ্রাণ তাওহিদী জনতাকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
এদিকে কুমিল্লায় পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার তীব্র নিন্দা ও শাস্তি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এবং মহাসচিব ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সংগঠনটির মুখপাত্র মুহাম্মদ আলী ফারুকীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুজামন্ডবে মুর্তির পায়ে পবিত্র কোরাআন শরীফ রেখে যে, অবমাননা কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা কোটি কোটি মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত ও ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের গহিত কর্মকান্ড কোন ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। প্রসাশন ও সরকার এর দ্বায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। একই ভাবে ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম । তাই এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মন্দির ভাংঙচুর জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি ও ইসলাম সমর্থন করে না।
আরও বলা হয়, অতীতেও আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে মসজিদে হামলা পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়ানো ইত্যাদি কর্মকান্ড সংগঠিত করেছে। গতকালের ঘটনা একই সূত্রের গাথা কিনা, এ ঘটনার সাথে যে যারা জড়িত, সে যেই হোক না কেন তাকে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশে আবহমানকাল ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হাজারো বছরের ঐতিহ্য থেকে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতি গোষ্ঠীর লোকজন নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আচার অনুষ্ঠান ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে স্বাধীন ভাবে পালন করে যাচ্ছে৷
নেতৃবৃন্দ বলেন, জামায়াত-শিবির ও একটি ধর্মাদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠি সু পরিকল্পিত ভাবে ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই মুসলিম সহ দেশের সকল নাগরিকদের ধর্য্য ধারন করার আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অতীতের ঘটনা প্রবাহকে সামনে রেখে, এ ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত রয়েছে এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারি কারো হাত রয়েছে কিনা? যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে অতিদ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার পুর্বক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।
এদিকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীছ আল্লামা কাজী মুঈনুদ্দীন আশরাফী ও মাহসচিব আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলাহ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দেশে বিদ্যমান ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য কুমিল্লার পূজা মন্ডপে পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননার ঘটনাটি পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয়েছে। তারা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র-নিন্দা প্রতিবাদ , প্রকৃত অপরাধীদের দৃুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যান্তরে যেনো শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট না হয়, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে সর্বস্তরের মুসলিম মিল্লাতকে শান্ত থাকারও আহবান জানান তারা।
কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দুরভিসন্ধিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাম্প্রদায়িক হামলা পরিচালিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে এর নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতৃবৃন্দ। সে সাথে কুমিল্লাসহ সারাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটি। সংগঠনটির মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এক কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংঠনটির নেতারা বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। যুগ যুগ ধরে সনাতন ধর্মানুসারীদের শারদীয় দূর্গাপূজায় সকল ধর্মের মানুষেরা সৌহার্দ্যপূর্ণ অংশগ্রহণ করে আসছে। গত ১৩ অক্টোবর ২০২১ কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার জন্য আমরা ব্যথিত হয়েছি। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দুরভিসন্ধিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাম্প্রদায়িক হামলা পরিচালিত হচ্ছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমানে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে অটুট বন্ধন রয়েছে তা বিনষ্টে তৎপর দেশি বিদেশি অপশক্তি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পরিকল্পিত ঘটনা ঘটিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক কলহ তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এহেন দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহবান জানান তারা।
নেতারা আরও বলেন, গতকালের ঘটনার জের ধরে আর যেনো কোনো সহিংসতা না ঘটে সে বিষয়ে সবাই ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণভাবে কার্যক্রম চালনার অনুরোধ করছি। সহিষ্ণুতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে যে কোন সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত রুখে দিতে সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।