এসময় তিনি বলেন, আমাদের সেকেন্ডারি মার্কেট অনেক বড় হবে। বর্তমানে সূচকের কারেকশন হচ্ছে প্রফিট টেকিংয়ের কারনে। যখন ৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের কথা বলেছিলাম, তখন অনেক কিছু মাথায় নিয়েই বলেছি। যা এখন বাস্তব হচ্ছে। সামনে হয়তো একদিনে ৫ হাজার কোটি ক্রস হয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে। তবে সে পরিস্থিতি এখনো আসেনি। সে জন্য আলাদা প্লাটফর্ম লাগবে। সুতরাং যা বলি বুঝেশুনেই বলি। কথা দিলে কথা রাখার চেষ্টা করি।আমাদের ট্রেজারি বন্ড চলে আসছে। সামনে পারপেচুয়াল বন্ড আসবে, এগুলোর সাইজ তো অনেক বড়। আমরা এসব মাথায় রেখেই কথা বলি। অনেকে ভাবেন হয়তো সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে কথা বলছি।
সম্প্রতি দেশের বাইরে রোড শো’র ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ৫০ বছরের বাংলাদেশের অর্জন সম্পর্কে বিশ্ব কতটুকু জেনেছে? আপনার সম্পর্কে যদি ভালো না জানে, নেতিবাচক ধারণা থাকে তবে বিদেশিরা কেন বড় অংকের বিনিয়োগ করবে? সে জন্য আমরা রোড শোর মাধ্যমে ইতিবাচক বিষয়গুলো জানাচ্ছি। আমরা (বাংলাদেশ) এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আরএমজি এক্সপোর্টার (পোষাক খাতে রপ্তানিকারক), হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিতে যাচ্ছি। আমরা বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দিচ্ছি। এগুলো যখন মানুষ জানবে তখনই বিশ্ব বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করবে। সে জন্য আমাদের ইমেজ ভালো করাই হচ্ছে রোড শো’র বড় কাজ। সুতরাং বীজ বপন করার পর ভালো রেজাল্ট আসতে হয়তো দুই-এক বছর লাগবে। লং টার্মের রেজাল্ট পেতে ধৈর্য্য ধরতে হবে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সাথে আলাপ হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রাণ গ্রুপের একটা বন্ড বিদেশিরা নিল। আইসিবির ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বন্ডে সুইজব্যাংক কাজ করছে। এসবের দেখাদেখি আরো শুরু হবে এটাই হচ্ছে রোড শো’র ফিডব্যাকের বিগেইনিং (শুরু)। এর শেষ অনেক বড় হবে, কিন্তু ধৈর্য্য ধরতে হবে, সময় দিতে হবে।
এসএমইতে আসার জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ওটিসি থেকে এটিবি ও এসএমই প্ল্যাটফর্মে আসা কোম্পানিগুলোর লেনদেন পুরোদমে কবে নাগাদ শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এখানে লেনদেনের সম্পূর্ণটাই পুরনোভাবে করতে গেলে আমরা পিছিয়ে যাবো। আমরা সবই করছি ডিজিটাল প্লাটফর্মে। ডিজিটালে রুপান্তর করার জন্য বিএসইসি ও ডিএসই একযোগে কাজ করছে। আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কনসালটেন্ট অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে, আমরাও দিয়েছি। দুই কনসালটেন্ট মিলে আমাদের মার্কেটকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ফাইন্যান্স প্রজেক্ট হতে যাচ্ছে, সেখানে তারাই এটাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে যাচ্ছে। ডিএসইও শতকোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে আইটিবেইজড করতে কাজ করছে। হয়তো আমাদের তিন-চার বছরের কাজ এক বছরেই হয়ে যাবে। তখন এই বোর্ডগুলোকে (ওটিসি, এটিবি ও এসএমই) আসল রুপে পাওয়া যাবে। যেমন আমাদের ট্রেজারি বন্ডের সাইজ দুই লক্ষ কোটির ওপরে, প্রথম সিটি ব্যাংকের পারপেচুয়াল বন্ড ট্রেড শুরু হবে, যে কোন মুহুর্তেই আমরা এটা নোট করবো। এর মাধ্যমে আমাদের নতুন কিছু দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। সেজন্য আমাদের আগের যে প্লাটফর্ম আছে সেটার শক্তি সামর্থ্য এত নতুন লোড নেয়া, বড় ট্রানজেকশন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আমরা দ্রুতগতিতে না গিয়ে স্লো যাচ্ছি। এটা (ডিজিটাল) হয়ে গেলে আমরা গতি বাড়াবো।
সম্প্রতি এসএমইতে আসা কোম্পানিগুলোর ট্রানজেকশন ছোট পরিসরে হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের কম অংশগ্রহণের বিষয়ে অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এসএমই’র কোম্পানিগুলো একটু রিস্কি (ঝুঁকিপূর্ণ), তাদের বিষয়ে প্রশ্ন আছে সে কারণে তাদের এখানে তৈরী করছি। সেখানে ঝুঁকি থাকায় আমরা বিনিয়োগকারীদের আনতে চাই না, শুধুমাত্র কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরদের এনেছি। কোয়ালিফাইড ইনভেস্টররা এসএমইতে উৎসাহের সঙ্গে বিনিয়োগ করছে। হয়তো তারা এখানে ভালো রিটার্ন দেখতে পাচ্ছে, আনন্দ পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এসএমইতে রিটার্ন ভালো পাওয়ায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও এ প্লাটফর্মে আসতে চাচ্ছে, কিন্তু আমরা তাদের ঝুঁকির মধ্যে রাখতে চাচ্ছি না। আমরা এখনো দেখছি এখানকার (এসএমই) ৬টা কোম্পানি কি করে, ঝুঁকি ও সমস্যা কি। এসব দেখে হয়তো আমরা বিনিয়োগের পরিমাণটা কমাতে পারি। এটা এখনো পরীক্ষার মধ্যেই আছে। তবে এখন এখানকার ইনভেস্টররা খুব উপভোগ করছে। সবাইকে নিয়ে এখনই এখানে (এসএমই) ঢোকাটা ঠিক হবে না। সবকিছু বুঝি, তারপর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের এসএমইতে বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। তবে অনেকে এসএমইতে লেনদেন করার জন্য বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যাদের ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে, তারা ৫০ লাখে উন্নীত করছে, সেটাও আমরা দেখছি।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারের সাথে এসব কোম্পানির (সরকারি) বিষয়ে যোগাযোগ হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, আরও কিছু শেয়ার অফলোড করা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করি সামনে এগুলোর ফলাফল দেখতে পাবেন।
ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে বলেন, আমরা ৩০ শতাংশে রেখেছিলাম, আইডিআরএ’র (বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা) চিঠি পেয়েছি। আইডিআরএ যদি মনে করে নতুনদের ৬০ শতাংশ শেয়ার আফলোড করবে, সেটা তারাই বলবে। আমাদের ৩০ শতাংশ থাকলেই হবে।