জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাস্তার মানুষদেরও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে তাদের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। এক্ষেত্রে শুধু সরকারি কর্মকর্তা না, সকল মানুষের অংশগ্রহনই একটি দেশের উন্নয়নের পূর্ব লক্ষণ। তবে যে সমস্ত লোকগুলো হলুদ সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত তারা এগুলো নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে। আমি মনে করি, তাদের এসব বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া কোন ব্যাক্তি স্বার্থে এভাবে কারো বিরুদ্ধে লেখা উচিৎ না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের লেখা উচিৎ। কারণ শুধু সরকারি কর্মকর্তা না, কারোরই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কোন বাধা নেই। যে কোন মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এটি যে কোন উন্নত দেশের লক্ষণ। এছাড়া এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে একটি দিকনির্দেশনা দিয়ে দেওয়া উচিৎ। দেশের শেয়ারবাজার যেখানে ছিলো এবং বর্তমানে যেখানে এসেছে এর পিছনে সরকারের পলিসি ও শেয়ারবাজার যারা দেখাশুনার দায়িত্বে রয়েছে তাদের সঠিক নেতৃত্বেই এসেছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, দেশের বাজারের অবস্থা ভালো থাকার কারণে বিদেশি এনআরবিরাও এখন এখানে বিনিয়োগ করছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগ করেছে। করোনা পরিস্থিতেও আমরা তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ছিলাম। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি দেশের শেয়ারবাজার ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক ভালো করবে। তাই সতর্ক ভাবে সবকিছু পরিচালনা করা ভালো। কিছু লোকের প্রোপাগান্ডার কারনে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেওয়া ভালো। সূচক কিছু উঠবে আবার কিছু নামবে। এভাবে চললেই ভালো। এর ফলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনা বাধায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে আইনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এটা নিয়ে যদি কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে সেটা কঠোরভাবে প্রতিহত করা উচিত।’
তবে পুঁজিবাজারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। সেটি আরও প্রায় নয় বছর আগে। পরে সেটি প্রত্যাহারও করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার সই করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, ‘ফটকা কারবারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগ বিধিবহির্ভূত। অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করতে পারেন না।’
ওই প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর পরই পুঁজিবাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তখন ধসের বৃত্তেই ঘোরপাক খাচ্ছিল পুঁজিবাজার। হঠাৎ প্রজ্ঞাপনে সেই ধস আরও জোরালো হয়। ক্ষতি মোকাবিলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারের লেনদেনও বন্ধ রাখা হয়। পরে মৌখিক আদেশে প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহারের বিষয়টি জানায় তথ্য অধিদপ্তর।
২০১০ সালের পুঁজিবাজারের বড় ধসের কারণ খতিয়ে দেখতে সরকার যে কমিটি করেছিল তার প্রধান ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালে প্রতিবেদন দিয়েছিল। প্রতিবেদনে ২৫টি সুপারিশের একটিতে বলা হয়, ‘এইসি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল, বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ার লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। তবে তারা শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। চাকরি বিধিতে নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্তকরণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মকর্তারা নিজ নামে, স্ত্রী, সন্তান, ভাইবোন, পিতা-মাতার নামে অথবা বেনামিতে শেয়ার লেনদেন করবেন না। সরকারি, আধসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত কর্মকর্তারা শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবেন কিন্তু প্লেসমেন্ট নিতে পারবেন না এবং তারা লেনদেনও করতে পারবেন না। বিনিয়োগের জন্য বিও অ্যাকাউন্ট থাকবে এবং বিও অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ কত টাকা শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা নিজ নিজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে।’