বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২১ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
বিমান বাহিনীর জন্য সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিগগির বিমান বাহিনীতে যুক্ত হতে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক বিমান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স র্যাডার ও সিমুলেটর, এটিএস সিমুলেটর, লেজার গাইডেড বোম্ব এবং এন্টি-শিপ মিসাইল। নতুন এসব সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
অনুষ্ঠানে নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ তিন বছর কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তোমরা আজ তোমাদের কাঙ্ক্ষিত কমিশন পেতে যাচ্ছ। এই আনন্দঘন মুহূর্তে আমি তোমাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজকের দিনটি তোমাদের জন্য যেমন আনন্দের তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে বিমান বাহিনীর গর্বিত অফিসার হিসেবে তোমাদের কর্মময় জীবন শুরু করতে যাচ্ছ। এই দায়িত্ব পালনকালে তোমরা সবসময় দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসবে। দেশের জন্য তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সততার সঙ্গে পালন করবে। আজ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে বিরাট দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে অর্পণ করা হলো- তা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে পালন করবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার একটি বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে আমি ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের একটি অংশ তুলে ধরছি- ‘আজ তোমরা তোমাদের ট্রেনিং শেষ করলে। কিন্তু তোমাদের মনে রাখতে হবে, এটা এক পর্যায়ের শেষ, আরেক পর্যায়ের শুরু। পরের পর্যায়ে দায়িত্ব অনেক বেশি। আজ তোমরা ট্রেনিং সমাপ্ত করে সামরিক বাহিনীর কর্মচারী হতে চলেছো। এখন তোমাদের ওপর আসছে দেশ এবং জাতির প্রতি দায়িত্ব, জনগণের প্রতি দায়িত্ব। যে সমস্ত সৈনিকদের তোমরা আদেশ-উপদেশ দেবে, তাদের প্রতি দায়িত্ব, তোমাদের কমান্ডের প্রতি দায়িত্ব এবং তোমাদের নিজেদের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমি আশা করি, তোমরা জাতির পিতার এই অমিয় বাণী বুকে ধারণ করে নিজেদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন তোমরা দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারো। তোমাদের পূর্বসূরিদের দূরদর্শিতা, পেশাদারিত্ব ও কঠোর পরিশ্রমে বিমান বাহিনী আজ যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তাকে তোমাদের মেধা, পেশাদারিত্ব ও দেশপ্রেম দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আমরা উন্নত বিশ্বের বিমান বাহিনীর সমপর্যায়ে দেখতে চাই।
এসময় বিমান বাহিনীর কাজে ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, করোনা মহামারির সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীসহ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মহামারির মধ্যেও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নিয়ে এসেছেন বিপুল পরিমাণে চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, মানবিক সাহায্যসহ বিমান বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে পৌঁছে গেছে নেপাল, মালদ্বীপ, লেবাননসহ বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশে। করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনেছে। অন্যদিকে দেশে আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদের আপনারা তাদের দেশের মাটিতে পৌঁছে দিয়েছেন। এজন্য আমি এ বাহিনীর সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।