বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে শেয়ারবাজারে

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে শেয়ারবাজারে
দেশের শেয়ারবাজারে গত এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। গত বছর তালিকাভুক্ত ২৩টি কোম্পানির শেয়ারে বিদেশিদের অংশগ্রহণ ছিল। এসব কোম্পানির মধ্যে ১৫টি কোম্পানির শেয়ারেই বিদেশিদের বিনিয়োগ কমেছে, বেড়েছে ৫টি কোম্পানিতে। আর বাকি তিনটি কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ অপরিবর্তিত ছিল। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বেশিরভাগ কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ কমলেও নতুন করে তিন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে বিদেশিরা। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২৬টি কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে।

এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ কমার বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেন। তারা যখন যে দেশকে বিনিয়োগের জন্য সুবিধাজন মনে করেন, সেখানেই বিনিয়োগ করেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হয়তো মনে করছেন বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এই মুহুর্তে তাদের জন্য সুবিধাজনক নয়, তাই তারা শেয়ার বিক্রি করেছেন, অন্য কোন দেশে বিনিয়োগ করছেন, আমাদের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। আবার যখন তাদের কাছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সুবিধাজনক মনে হবে তখন আবার বিনিয়োগ করবেন। সঠিক মূল্য যে দেশে পাবে সেই দেশেই বিদেশিরা বিনিয়োগ করবেন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমানও বিদেশি বিনিয়োগ কমার বিষয়টিকে ‘অস্বাভাবিক’ মনে করছেন না। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, সবাই লাভের আশায়ই বিনিয়োগ করে। স্বাভাবিকভাবে বিদেশিরাও যেখানে বেশি লাভ পাবেন সেখানেই বিনিয়োগ করবেন। এখন বিদেশি বিনিয়োগ কমছে, একটা সময় এটা আবার বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ কমবে-বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির কাছে বিভিন্ন দেশে বিএসইসির রোড শো’র বিষয়েও কথা হয় অর্থসংবাদের। তিনি নিজেও কয়েকটি রোড শোতে উপস্থিত ছিলেন। তার মতে- শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য রোড শো করা হয়নি, রোড শো করা হয়েছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি সম্পর্কে বিশ্বকে জানানোর জন্য। সাইদুর রহমান বলেন, রোড শো’তে মূলত বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এটার ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। বিশ্বে এখন বাংলাদেশকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে আশা করি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এই রোড শো’র ইতিবাচক প্রভাব আমরা দেখতে পাবো।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ হারানোর শীর্ষে ছিল আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ডেল্টা-ব্র‌্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স, ম্যারিকো বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক ব্যাংক।

আইডিএলসির ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে।

এছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বিদেশি বিনিয়োগ এক বছরে কমেছে ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০২০ সালে এ কোম্পানিতে ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ থাকলেও ২০২১ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশে।

ওষুধ খাতের কোম্পানি স্কয়ার ফার্মা এক বছরে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ হারিয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটির বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি বিনিয়োগ আছে ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।

আর্থিক খাতের কোম্পানি আইপিডিসি ফাইন্যান্সে ২০২০ সালে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ ছিল। তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানিটির ২ দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ০ দশমিক ০৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ডেল্টা-ব্র্যাক হাউজ ফাইন্যান্সে ২০২০ সালে ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ থাকলেও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিদেশি বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ম্যারিকো বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০২০ সালে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

ব্র্যাক ব্যাংকে ২০২০ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৩৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে।

সিঙ্গারের ০ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, বার্জার পেইন্টসের ০ দশমিক ৬১ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংকের ০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, গ্রামীনফোনের ০ দশমিক ২৭ শতাংশ, বাটা সু’র ০ দশমিক ২৩ শতাংশ, লাফার্জ হোলসিমের ০ দশমিক ১৩ শতাংশ, রেকিট বেনকিজারের ০ দশমিক ১০ শতাংশ, এমজেএল বাংলাদেশের ০ দশমিক ০৩ শতাংশ, অলিম্পিকের ০ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং ইউনিলিভারের শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগ ০ দশমিক ০১ শতাংশ কমেছে।

২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। এসব কোম্পানির মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল বেক্সিমকো ফার্মাতে।

২০২০ সালে বেক্সিমকো ফার্মায় বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২০ সালের শেষে এর পরিমাণ দাড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১ দশমিক ০৬ শতাংশ।

আরএকে সিরামিক ও রবিতে ২০২০ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল না। তবে ২০২১ সালে আরএকে সিরামিক ০ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং রবি ০ দশমিক ০১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ০ দশমিক ০১ শতাংশ এবং বিএসআরএম লিমিটেডের ০ দশমিক ০২ শতাংশ বিদেশি বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে।

রেনেটা লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট এবং সামিট পাওয়ারের শেয়ারে ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ অপরিবর্তিত রয়েছে। এই তিন কোম্পানির মধ্যে রেনেটায় ২২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সামিট পাওয়ারে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং হাইডেলবার্গ সিমেন্টে ০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত