অন্যদিকে আয়কর অটোমেশনের মাধ্যমে কর পরিকাঠামোর সব কার্যক্রম সহজ করে করজাল বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভোলপমেন্ট (বিল্ড)।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমন প্রস্তাবনা দেয় বিডা, বেজা, বেপজা, বিল্ড ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
আলোচনায় বিডার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগের মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগে সবসময় পার্শ্ববর্তী এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর করপোরেট করহার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। বাংলাদেশে উচ্চতর করহারের কারণে অনেক আগ্রহী বিনিয়োগকারীও বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। নতুন বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণের উদ্দেশ্যে এই হার হ্রাস করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে করপোরেট কর হার ২১ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যে। কিন্তু আমাদের দেশে ননলিস্টেট কোম্পানির কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ, যা মোট ৪০ শতাংশের ওপরে পড়ে যায়। এ করহার কমানো দরকার। এটা কমাতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যাবে। এটি বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে পজিটিভলি উপস্থাপনে সহায়তা করবে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের কাছ থেকে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব আশা করিনি। অনেক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘসময় এত বেশি করপোরেট কর ছাড় দেওয়া আছে যে অনেক সময় ওই কোম্পানির কার্যক্রমই শেষ হয়ে যায়। বিনিয়োগে করপোরেট কর বাধা হওয়ার কথা নয়। তারপরেও বিষয়টি আমরা ভেবে দেখবো।
এছাড়া কোনো কোম্পানির বিদেশি পরিচালকদের টিআইএন বাধ্যতামূলকের বিষয়টি রহিত করার দাবি জানিয়ে বিডার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগের মহাপরিচালক বলেন, অর্থ আইন মোতাবেক কোম্পানি গঠনে পরিচালকদের টিআইএন বাধ্যতামূলক। কিন্তু বড় মাপের বিনিয়োগকারীরা সাধারণতঃ বাংলাদেশে আসেন না বা ব্যবসায়িক ভ্রমণ ছাড়া অবস্থান করেন না। তাদের জন্য টিআইএন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রহিত করা প্রয়োজন। পরে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের জন্য প্রতিষ্ঠানের বিদেশি পরিচালকরা দেশে অবস্থান করুক বা না করুক তাদেরও টিআইএন এবং ওয়ার্ক পারমিট দাখিল করতে হয়। এক্ষেত্রেও টিআইএন এবং পিআই (ওয়ার্ক পারমিট) ভিসা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
ফেসবুক, গুগলের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠান করপোরেট কর দেয় না উল্লেখ করে মাহবুব বলেন, আমাজন, ফেসবুক ও গুগলের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনলাইন মিডিয়া কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া বাংলাদেশে ভ্যাট দিলেও করপোরেট কর দেয় না। তাদের আইনি প্রতিনিধিদের করপোরেট করের আওতায় আনা উচিত।
এছাড়া লভ্যাংশ আয়ের ওপর অগ্রিম কর কোম্পানির জন্য ২০ থেকে ১০ শতাংশ ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১০ থেকে ৫ শতাংশ হ্রাস করা, প্লাস্টিক খাতে কন্টিনিউয়াস বন্ডের অনুমতি দেওয়া, টেলিকম সেক্টরের মোট প্রাপ্তির ওপর ন্যূনতম টার্নওভার কর কমানোসহ ২২টি প্রস্তাবনা পেশ করে বিডা।
অন্যদিকে রাজস্ব বোর্ডের পদ্ধতিগত জটিলতা ও বৈষম্য হ্রাস করা, কর আহরণকারী এবং প্রদানকারীর মধ্যে স্বচ্ছতা ও আস্থা বৃদ্ধি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছে বিল্ড।
এছাড়া ক্রমান্বয়ে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতিতে কর দিতে উৎসাহিত করা ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করের সার্টিফিকেট করদাতাকে পাঠানোর কথা বলেছে বিল্ড। সেইসঙ্গে অডিট কৌশল যথাসম্ভব সহজীকরণ, আয়কর অটোমেশনের মাধ্যমে কর পরিকাঠামোর সব কার্যক্রম সহজীকরণ করার পরামর্শ সংগঠনটির।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ।