প্রণোদনায় পিছিয়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলো

প্রণোদনায় পিছিয়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলো
করোনা মোকাবেলায় পৃথিবীর সব দেশই বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বলা যায়, কোন দেশ কতটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা নির্ভর করছে কারা কতটা প্রণোদনা দিয়েছে, তার ওপর। বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট বা বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, যেসব দেশ সবচেয়ে কম হারে প্রণোদনা দিয়েছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম।

বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জিডিপির সাপেক্ষে ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, যদিও যার বড় অংশ ঋণ আকারে দেওয়া হয়েছে। সরকার মূলত ব্যাংক সুদের একটি অংশ বহন করেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, জিডিপির সাপেক্ষে সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা দিয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। তারা প্রণোদনা দিয়েছে জিডিপির ৪৫ শতাংশের বেশি। এরপর জাপান প্রণোদনা দিয়েছে ৪৩ শতাংশ। যুক্তরাজ্য দিয়েছে ৩৫ শতাংশের ওপরে। যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ২৮ শতাংশের ওপর। এ ছাড়া পেরু, চিলি, ব্রাজিল দিয়েছে ১৫ শতাংশের ওপর। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দেশ ভারত দিয়েছে ১০ শতাংশের ওপর। এ ছাড়া চীন দিয়েছে ৫ শতাংশের ওপর।

২০২০ সালের চরম দুঃসময়ে বিশ্বের প্রায় সব বড় অর্থনীতির সংকোচন হলেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম বাংলাদেশের জন্য অতটা দুরূহ ছিল না। কিন্তু প্রণোদনা যা দেওয়া হয়েছে, তা পেয়েছে মূলত বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। এমনকি তাদের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটাও তারা ঠিকঠাক পায়নি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার ঋণ পেয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছে। আর বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের পুনরুদ্ধারের গতি কম। অথচ দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই এসএমই খাতে। সে জন্য অনেক মানুষের আয় এখনো কোভিডের আগের সময়ের চেয়ে কম।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, সারা দেশে ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন প্রায় ৮০ লাখ উদ্যোক্তা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র কারখানা রয়েছে ৪০ হাজার ২৫০টি। আর বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, সারা দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছে প্রায় ৫৬ লাখ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে।

অথচ সম্প্রতি দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের এক জরিপে জানা গেছে, ৯ শতাংশের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা ঋণ পেয়েছে। আর প্রণোদনা যারা পেয়েছে, তাদের ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের হার প্রণোদনা যারা পায়নি, তাদের চেয়ে বেশি। প্রণোদনা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের হার ৭১ শতাংশ, আর প্রণোদনা না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুদ্ধারের হার ৫৮ শতাংশ। সে কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে আছে।

বিভিন্ন উন্নত দেশের সরকার সরাসরি মানুষের হাতে প্রণোদনার অর্থ পৌঁছে দিয়েছে। তাদের প্রণোদনার বড় একটি অংশ ছিল এই প্রত্যক্ষ সহায়তা। বাংলাদেশ সরকার দুই ধাপে ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে প্রণোদনার অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষমেশ তথ্যের অভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এ ছাড়া অন্য কোনো নগদ সহায়তা প্রকল্প সরকারের ছিল না। ফলে অনেক মানুষ হারানো আয় আর পুষিয়ে নিতে পারেননি। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কা। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের যাপিত জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও অর্থের প্রবাহ বাড়াতে হবে। সে জন্য ঋণদাতাদের ঋণের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। সে জন্য আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আসতে হবে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেট্রোল-ডিজেলের নতুন দাম ঘোষণা
সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প