ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এবং একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখছেন, তাদের সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার প্রতি বছর গৌরবময় একুশে পদক প্রদান করেন।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধে অবদান, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্যবিমোচনে অবদান রাখা ব্যক্তি, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ চার লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়ে থাকে।
একুশে পদক প্রদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, একুশের শহীদরা যেমন জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, তেমন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সকল গুণীজন জাতির গর্ব ও অহংকার। যদিও প্রকৃত গুণীজন পুরস্কার বা সম্মাননার আশায় কাজ করেন না, তবু পুরস্কার-সম্মাননা জীবনের পথ চলায় নিরন্তর প্রেরণা জোগায়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে এবার একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘একুশে পদক ২০২২’ প্রদানের জন্য ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ঘোষণা করে।
এ বছর ভাষা আন্দোলন বিভাগে দুজন, মুক্তিযুদ্ধে চারজন, শিল্পকলা (শিল্প, সংগীত ও নৃত্য) বিভাগে সাতজন, সমাজসেবা বিভাগে দুজন, ভাষা ও সাহিত্যে দুজন, গবেষণায় চারজন এবং সাংবাদিকতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিক্ষায় একজন করে পুরস্কার পেয়েছেন।
ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে মোস্তফা এম এ মতিন (মরণোত্তর) এবং মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (মরণোত্তর) পুরস্কার পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে মনোনীত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউএবিএম রহমান ও আমজাদ আলী খন্দকার।
নাচের জন্য মনোনীত হয়েছেন জিনাত বরকতুল্লাহ, সঙ্গীতে নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান বেনু, অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ।
সাংবাদিকতায় এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন এবং শিক্ষায় অধ্যাপক ডা. গৌতম বুদ্ধ দাস মনোনীত হয়েছেন। সমাজসেবা বিভাগে মনোনীত হয়েছেন এস এম আব্রাহাম লিংকন ও সংঘরাজ ডা. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো।
ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ। গবেষণা বিভাগে মনোনীত হয়েছেন ডা. মো. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, ডা. মো. এনামুল হক (টিম লিডার), ডা. শাহানাজ সুলতানা (টিম) এবং ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস (টিম)।
১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে জাতি ২১ ফেব্রুয়ারি ‘অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করতে প্রস্তুত হয়েছে।