আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধমুখী প্রবণতার মধ্যে এক বছর আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি দামে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিই এলএনজি কেনার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়ার কাছ থেকে এক কার্গোতে করে এ পরিমাণ এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়ছে ২৯ দশমিক ৭০ ডলার, যা গত বছর মার্চে ছিল ৭ দশমিক ২১ ডলার। তখন একই এলএনজি সরবরাহকারী কোম্পানি ভিটল এশিয়ার থেকে ওই দামে কেনা হয়েছিল এলএনজি।
তবে বুধবারের অনুমোদন দেওয়া দাম এর আগে গত ৬ অক্টোবর গানভর সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে প্রতি ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি কিনতে দেওয়া অনুমোদনের চেয়ে কম। ওই দিন ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি ওই কোম্পানির কাছ থেকে ৩৬ দশমিক ৯৫ ডলার মূল্যে এলএনজি কিনতে অনুমোদন দিয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, আন্তর্জাতিক দরপত্রে পেট্রোবাংলার তালিকাভুক্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের শুধু ভিটল এনার্জিই অংশ নেয় এবং তাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হয়।
“দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে একমাত্র দরদাতা সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়ার কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ২৯ দশমিক ৭০ ডলার মূল্যে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনা হবে।“
এ জন্য বাংলাদেশি টাকায় এতে মোট খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যোগ করেন তিনি।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলকালীন সময়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়তে শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে বছর শেষে সরকারকে অত্যাবশ্যকীয় এ জ্বালানি কেনার পরিকল্পনায় কাটছাঁটও করতে হয়েছিল।
ওই সময় জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের পাঁচ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় তা তিন কার্গোতে নামিয়ে আনার কথা বলেছিলেন তিনি।
গত শনিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সাল ছিল এলএনজির বাজারের অস্থিরতম একটি সময়। বছরের শুরুতে প্রতি ইউনিটের দাম দুই ডলার থাকলেও অক্টোবরের দিকে তা বেড়ে গিয়ে ৫৬ ডলারে ঠেকে। তবে চলতি বছরে এলএনজির বাজার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানায় শীর্ষস্থানীয় জ্বালানি কোম্পানি শেল।
গত বছর বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া, বার্ষিক চাহিদা ৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়া ও কোভিড মহামারীর কারণে এলএনজির দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল।
এদিন ক্রয় কমিটি সিঙ্গাপুরের এগ্রোকর্পো ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানির অনুমোদনও দিয়েছে। এজন্য প্রতি টন ৩৯০ দশমিক ৯২ ডলার হিসাবে মোট খরচ হচ্ছে এক কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ১৬৮ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
আর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আগামী ৮ থেকে ১১ মার্চের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এফএও রিজিওনাল কনফারেন্স ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের ৩৬তম আসরের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়।
একই কমিটি নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে এক হাজার একর জমির ওপর নির্মাণাধীন জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলের চূড়ান্ত অনুমোদনও দিয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও সমিতোমো করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনায় গঠন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ স্পেশাল ইকনোমিক জোন লিমিটেড’।
অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তুলতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সুমিতোমোর সঙ্গে ভূমি উন্নয়ন চুক্তি করে বেজা।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ মে জাপানি কোম্পানিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের চুক্তি করে বেজা। প্রথম দিকে একে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল বলা হলেও এখন কাগজে কলমে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড’।