মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে ডিবিএর সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান মন্দার কারনে পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছে। ব্রোকারেজ হাউজসহ পুঁজিবাজারের অন্যান্য অংশীজনরা ব্যবসা পরিচালনা করতে প্রায় ব্যর্থ। এছাড়া কোভিড-১৯ এরফলে দেশের অন্যান্য সকল ব্যবসা-বানিজ্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় পুঁজিবাজারকে সচল ও গতিশীল রাখতে ডিবিএ ৬টি প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা : এক্ষেত্রে ব্রোকারদের অফিস পরিচালন ব্যয়ভার (অফিস ভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি) মিটিয়ে সকল কার্যক্রম সচল রাখার জন্যে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ৪টি উপায়ে আর্থিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে।
* প্রদত্ত অর্থ সহায়তা কমপক্ষে ১ বছর (১২ মাস) এর জন্য প্রদান করা।
* ব্রোকারদের নিজ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট মোতাবেক প্রদেয় অর্থের পরিমান বরাদ্দ করা।
* উক্ত অর্থ সহায়তা কোমল ঋণ (soft Loan) হিসেবে ৩% সুদে মোট ২৪টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে।
* উক্ত কিস্তির অর্থ ব্রোকারগন ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মাসিক ভিত্তিতে একটানা পরিশোধ করবে।
২। শেয়ার লেনদেনের উপর প্রদেয় ব্রোকারদের অগ্রিম আয়কর শিথিল করা : ব্রোকারদের অফিস কার্যক্রম সচল রাখতে, প্রাতিষ্ঠানিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে বিনিয়োগকারীদের মাঝে উন্নত বিনিয়োগ সেবা ও সুবিধা প্রদান করে বিনিয়োগে আগ্রহী করার লক্ষে শেয়ার লেনদেনের উপর ব্রোকারদের প্রদেয় অগ্রিম আয়কর ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০১৫% করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৩। বিদ্যমান মার্জিন সুবিধাভোগী বিনিয়োগকারীদের জন্য পূণঃবিনিয়োগের ব্যবস্থা করা : মার্জিন ঋণের আওতাধীন বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের পূনরায় লেনদেনে ফিরিয়ে এনে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফোর্স সেল থেকে বিনিয়োগকারীকে সুরক্ষা প্রদানসহ বাজারে লেনদেনের প্রবাহ বাড়াতে নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় পূণঃঅর্থের যোগান দেওয়া।
*উক্ত আর্থিক সহায়তায় কোমল ঋণ (soft Loan) হিসেবে ৩% সুদে প্রদানযোগ্য হবে।
* উক্ত অর্থ শুধুমাত্র বিদ্যমান মার্জিন ঋণ হিসেবধারীদের অনুকূলে পূণঃবিনিয়োগের জন্যে ব্যবহৃত হবে।
* উক্ত অর্থ ৩ বছর মেয়াদকালীন সময়ের জন্য প্রদান করা হবে।
৪। মার্জিন একাউন্টে লোনের বিপরীতে আরোপিত সুদ ১ বছরের জন্য স্থগিত করা : বিদ্যমান মার্জিন একাউন্টে লোনের বিপরীতে আরোপিত সুদ ১ বছরের জন্য স্থগিত করা। এতে করে বিনিয়োগকারী তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সুযোগ পাবে এবং লেনদেনে অংশগ্রহন করে বাজারকে সক্রিয় করে তুলবে।
৫। অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করা : পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।
* উক্ত অর্থ ১:১ ভিত্তিতে বন্ড মার্কেট ও সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হবে।
* বন্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থ ৩ বছরের জন্য ব্লক থাকবে।
* উক্ত বন্ড এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেনযোগ্য হবে।
৬। ব্রোকার কর্তৃক প্রদেয় সিডিবিএল ফি ও চার্জ থেকে পূর্ণ অব্যাহতি প্রদান : ব্রোকারদের নিজস্ব অফিস কার্যক্রম চালনার পাশাপাশি বাজার বিমূখ বিনিয়োগকারীদের বিভিন্নমূখী সেবা ও সুবিধা প্রদান করে বাজারমূখী করতে বার্ষিক বিও ফি ও অন্যান্য সকল প্রকার চার্জ ১ বছরের জন্য পূর্ণ মওকুফ করা।
পুঁজিবাজার উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন একাকার। পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্টক ব্রোকারদের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এরসাথে সংশ্লিষ্ট স্টক ব্রোকারসহ সকল অংশীজনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সচল রেখে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য উল্লেখিত সুপারিশমালার যথাযথ বাস্তবায়নে সদয় বিবেচনা ও অনুমোদন প্রার্থনা করা হয়েছে।