সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সব সূচকই বেড়েছে। একই সঙ্গে এদিন টাকার অংকে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে।
ডিএসইর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক্সচেঞ্জটির প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ বুধবার ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছে। বর্তমানে সূচকটি ৬ হাজার ৬৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে সূচকের ব্যপক পতন হয়। এতে অস্বস্তি শুরু হয় বিনিয়োগকারীদের। গত ২ মার্চ ‘ডিএসইএক্স’৫৩ পয়েন্ট হারিয়েছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সূচকটি হারায় আরও ৩ পয়েন্ট। পরের কার্যদিবস রবিবারও সূচকটি ৫৭ পয়েন্ট হারায়। আর সোমবারের (৭ মার্চ) বড় পতনে প্রধান সূচক হারায় ১৮২ পয়েন্ট। সবমিলিয়ে চার দিনের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৯৫ পয়েন্ট হারায়। এতে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন।
তবে মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়ায় দেশের পুঁজিবাজার। স্থিতিশলতা তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে এক শ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড কমিটিকে। এ খবরে গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচকের ১৭ পয়েন্টের উত্থান হয়। আর লেনদেন শেষে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে এসে ঘোষণা দেন, এক দিনে কোনো শেয়ারের দর ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। এতে আরও চাঙা হয় শেয়ারবাজার। যার প্রভাবে আজ ‘ডিএসই এক্স’ পেয়েছে ১৫৫ পয়েন্ট।
প্রধান সূচকের সঙ্গে এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অপর দুই সূচকও বেড়েছে। বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই ৩০’ বেড়েছে ৪১ পয়েন্ট। আর শরীয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই এস’ বেড়েছে ৩০ পয়েন্ট।
আজ সূচকের বড় লাফে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ওয়ালটন হাই-টেকের। কোম্পানিটির শেয়ারদর ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সূচকে যোগ হয়েছে প্রায় ২৫ পয়েন্ট।
গ্রামীনফোনের কারণে সূচক পায় আরও ৮ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বার্জার পেইন্ট, লাফার্জ হোলসিমের কারণে সূচকে যোগ হয় ১৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট।
এছাড়াও, রেনেটা, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো, ইউনাইটেড পাওয়ার গ্রিড এবং রবির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে সূচকে আরও ১৬ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট।
এই দশ কোম্পানি মিলে বুধবার ডিএসইর সূচকে মোট ৬৬ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট যোগ করেছে।
সূচকের বড় লাফের দিনে আরও বড় উত্থানে বাধা ছিল আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো সুকুক, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল এবং ইসলামী ব্যাংক মুদরাবা পারপেচুয়াল বন্ড। কোম্পানিগুলোর কারণে আজ সূচক হারিয়েছে ২ দশমিক ৯১ পয়েন্ট।
সূচকের বড় উত্থানের দিনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে টাকার অংকে লেনদেনও বেড়েছে। আজ ডিএসইতে ৭৭৩ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) লেনদেন হয়েছিল ৭৪৬ কোটি ৯ লাখ টাকার।
বুধবার ডিএসইতে ৩৭৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৩৬৫টি কোম্পানিরই শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে মাত্র ৩টি কোম্পানির। বাকি ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর আজ অপরিবর্তিত ছিল।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৬ শতাংশের দরবৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে নিটল ইন্স্যুরেন্স । আজ শেয়ারটির দর বেড়েছে ৪ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডি থাই ফুডের শেয়ারদর ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে।
বুধবার টপটেন গেইনার তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- বিডিকম অনলাইন, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স,ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স এবং জেনেক্স ইনফোসিস।
সূচকের বড় উত্থান আর ৯৬ শতাংশ কোম্পানির দরবৃদ্ধির দিনে শেয়ারদর হারিয়েছে মাত্র তিন কোম্পানি। ফলে বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের টপটেন লুজার তালিকা পূর্ণ হয়নি।
যে তিন কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে তাদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। আজ কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৪ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমেছে।
দর হারানোর তালিকায় থাকা অপর দুই কোম্পানি হলো- তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল এবং ব্র্যাক ব্যাংক। এই দুই কোম্পানির শেয়ারদর আজ যথাক্রমে ১ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট এবং ০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমেছে।