বুধবার (০৯ মার্চ) দুবাই ফেস্টিভ্যাল সিটির হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশ মব: নেটওয়ার্কিং ডিনার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিএসইসি এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। আর এ অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এখন বাংলাদেশে আসছেন। তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সুবিধা নিচ্ছেন। সেজন্যই আমরা আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। দেরি হওয়ার আগে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করুন। সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এগিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারও। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের রিটার্ন এশিয়ার মধ্যে সেরা। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের সময় এখনই। দেরি হওয়ার আগে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করুন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজার অনেক বাড়ছে। গত ত্রিশ বছরে এই পুঁজিবাজার বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। আমরা আশা করি যে, এটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে আমাদের বাজার মূলধনও বাড়ছে। আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন এটি কিভাবে উন্নতি করছে। এশিয়ান ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটাল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে নিয়ে কথা বলে। আমরা গত দুই বছরে মধ্যে তিন মাস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা নিটা অ্যাকাউন্ট (অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের টাকা অ্যাকাউন্ট) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি খুব ভালো পণ্য। একটি নিটা অ্যাকাউন্ট এবং বিও অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে, আপনার পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের কাছে অর্থ পাঠাতে পারেন, আপনি নিজেই। একইসঙ্গে আপনার পোর্টফোলিও পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়া বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে মুনাফা আপনি একই নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তুলে নিতে পারবেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন আমরা জানি আমাদের লক্ষ্য কি। আমাদের সুবিধা কী এবং আমাদের কী কৌশল অবলম্বন করা উচিত। তাই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উত্থান শুরু হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার মূলত ৫টি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে- দ্রুত অর্থনীতির বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা, স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার হারসহ অনুকূল সুদের হার, প্রত্যাবাসনের জন্য কোনও প্রাক-অনুমোদন নেই এবং বিনিয়োগের জন্য একটি সম্পদশালী ইতিবাচক অর্থনীতি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পর্যটন একটি বড় ধরনের বিনিয়োগের আকর্ষনীয় খাত। বাংলাদেশের কুয়াকাটা একটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল। যেখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া কক্সবাজার বৃহত্তম সি বিচ, সিলেট, টাঙ্গুয়া হাওর, সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের মতো আকর্ষনীয় পর্যটন জোন রয়েছে বাংলাদেশে। তাছাড়াও প্রাকৃতিক অনেক সুন্দর সুন্দর এলাকা বাংলাদেশে রয়েছে। ফলে বড় ধরনের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটন খাতে। এছাড়া রয়েছে এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ। আর স্টার্টআপ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। তরুণ প্রজন্ম নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে স্টার্ট আপ কোম্পানি করছে। পাঠাও বাংলাদেশের একটি ছোট কোম্পানি, তবুও সেটি মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। তরুণ প্রজন্ম নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে। তারা সফলও হচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ খাতে অনেক জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি হচ্ছে।’
‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশ মব: নেটওয়ার্কিং ডিনার’- অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজার) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনসহ সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ দুবাইয়ের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেক হোল্ডাররা অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআই’র বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হবে।