মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় বিদ্যানন্দের ফেইসবুক পেজে তিনি লেখেন, 'আমার সিদ্ধান্তগুলোতে পাগলামি এবং আবেগের প্রভাব যুক্তির চেয়ে বেশি থাকে। ক্ষমা চাচ্ছি এই সীমাবদ্ধতার জন্য। আজকে আমার এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ে আমার বক্তব্য প্রকাশ করলাম -
১/ আমি বিদ্যানন্দ ছাড়ছি না, পরিচালনা পর্ষদেই থাকছি। শুধু দায়িত্ব পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। পরিচালনা পর্ষদে এখনো সে আবেদন গ্রহণ করেনি।
২/ কোনো চাপে এই সিদ্ধান্ত নেইনি আমি। শারীরিক ক্লান্তি এবং ব্যক্তিগত আবেগের কাছে হার মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া।
৩/ সব ধর্মের বিশেষ করে মুসলমানদের সহযোগিতায় এতদূর আসা। কিছু মন্দ লোক অপপ্রচার করে সেটা খুবই নগন্য।
যদি আমার আগের বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাই। এবং অনুরোধ থাকবে, আমাদের পক্ষে লিখতে গিয়ে অনুমানভিত্তিক অন্যকে দোষারোপ করবেন না।
কিশোর কুমার দাশ, স্বেচ্ছাসেবক প্রধান।'
এর আগে তার পদত্যাগ দিনভর আলোচনার বিষয় হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। অনেকেই একে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করেছেন।
তবে জানা গেছে, করোনা মহামারি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ তাদের ক্যাম্পেইন যতদিন চালিয়ে যাবে ততদিন চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন কিশোর কুমার দাস। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান বা স্বেচ্ছাসেবক প্রধান।
তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিদ্যানন্দের ঢাকা বিভাগের সমন্বয়ক সালমান খান ইয়াসিন।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ফেইসবুক ইউজার কারও কারও নেগেটিভ কমেন্টে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন আমাদের চেয়ারম্যান। তা ছাড়া কাজের এত চাপও তিনি সামলাতে পারছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থেকে কাজ করবেন। তারপর তিনি হঠাৎ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেও আমরা তার রিজাইন লেটার অ্যাকসেপ্ট করিনি। কোভিড-১৯ ক্যাম্পেইন শেষ হলে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত তিনি চেয়ারম্যানের পদে বহাল থাকছেন।
সালমান সংবাদ মাধ্যমকে আরো বলেন, কিশোর কুমার দাস প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে গেলে যোগ্য কাউকে না পেলে পদটি শূন্য থাকবে। দেশের এই সঙ্কটকালে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য ত্রাণ নিয়ে পুরো শহরময় ছুটছে এর স্বেচ্ছাসেবীরা।
যখন চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, নার্সদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের সংকট ছিল তখন বিদ্যানন্দ নিজেদের বাসন্তী গার্মেন্টসে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বানিয়েছে। সেই পিপিইগুলো বিনামূল্যে 'সরবারাহ' করেছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
তারা মানুষের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিতে রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, গুলশান, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে বসিয়েছে অস্থায়ী হাত ধোয়ার বেসিন। সরবারহ করা হয়েছে পানি ও সাবান। তৈরি করেছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক; যা বিতরণ করা হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষদেরকে৷ পুরো রমজান মাসজুড়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এলাকায় দুস্থ পরিবারগুলোকে ইফতার ও সেহেরি দিচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে একটি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারে নয়, বরঞ্চ ব্যক্তিগত ত্যাগে স্বেচ্ছাসেবকদের অনুপ্রাণিত করার এবং নতুন মেধায় প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্নে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিশোর দাস। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বিষয়টি হতাশার নয়। বরঞ্চ পদ আঁকড়ে থাকার মানসিকতার এই সমাজে উল্টা পথে হাঁটতে পারার জন্য গর্ব হচ্ছে। আর বিদ্যানন্দে পদে কী যায় আসে? এখানে তো কাজটাই আসল, আর সেটাই আমরা করে ছাড়ব।