করোনার কারণে অবস্থা এমন হলেও বাজেট ঘোষণা পেছাবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বাজেট যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবেই হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) এক অডিও বার্তায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেট আগামী ১১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বাজেট প্রণয়নের আগে প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ, এনজিওসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষের পরামর্শ নেয়া হতো এবং তারপর তা ঘোষণা করা হতো। এতে বাজেটটার গ্রহণযোগ্যতা বাড়তো জনগণের কাছে। কিন্তু এবার সে সুযোগ আমরা পাচ্ছি না। আমরা দীর্ঘদিনের এ নিয়ম এবার বাস্তবায়ন করতে পারছি না।
‘তবে এবার বাজেট বিষয়ে অনলাইনে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, এনজিওদের যুক্ত করার চেষ্টা করছি। এজন্য ওয়েবসাইটে আমরা পরামর্শ নিচ্ছি। দলমত নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিক সামনের বাজেটটি কীভাবে দেখতে চান, এ ব্যাপারে তাদের মতামত চাচ্ছি। আমরা তাদের আশ্বস্ত করতে পারি। তাদের সব ধরনের প্রস্তাব আমরা পড়বো। যতগুলো সম্ভব আমরা গ্রহণ করবো। যেগুলা এবার গ্রহণ করতে পারবো না, সেগুলো আগামী বছরের জন্য রেখে দেয়া হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাজেট দেরি হবে না। বাজেট পেছাবে না। বাজেট পেছানোর উপায় নেই। সংবিধান যেভাবে চায় সেভাবেই বাজেট হবে। আমাদের অনেক চলমান প্রকল্প আছে সেগুলা শেষ করতে হবে। এজন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আমরা বছরটা যেভাবে শুরু করেছিলাম সেভাবে শেষ করতে পারছি না। প্রথম আট মাস আমরা ভালোভাবে কাটিয়েছি। এখন শেষ চার মাস খারাপ যাচ্ছে। দেশবাসীর জন্য দোয়া করছি। আমিও দোয়া চাচ্ছি। সবার জন্য দোয়া করছি, সবাই যেন করোনামুক্ত থাকতে পারি।
এদিকে জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১১ জুন বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন। একই সঙ্গে সংসদে উত্থাপন করবেন ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট।
এর আগে সংসদে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেয়া হবে। প্রতি বছরই বাজেট পেশ করার পূর্বে অনুমোদন গ্রহণের সুবিধার্থে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক আয়োজন করা হয় এবং রাষ্ট্রপতির সুপারিশ গ্রহণের সুবিধার্থে সংসদ ভবনে তার উপস্থিতির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এবারও তাই হতে যাচ্ছে।
এছাড়া গত ৩ মে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী বাজেটকে আরও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যম সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে মতামত গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে স্টেকহোল্ডাররা এখানে মতামত দিতে পারবেন।
অর্থ বিভাগের ওয়েরসাইটে গিয়ে জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ প্রণয়নে মতামত/পরামর্শ (Opinion/Suggestion for Budget 2020-21 Preparation) অপশনে ক্লিক করেই যে কেউ তার মতামত জানাতে পারবেন।
দেশ বা বিদেশ থেকেও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়নের ফরম পূরণ করে মতামত ও সুপারিশ দেয়া যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে এবারের বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলও পাওয়া যাবে, যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এবার পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে।