তিনি বলেন, দেশের বাইরে টাকা পাচার হয়, এটি অস্বীকারের সুযোগ নেই। আমরা সেগুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ‘পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে আপনারা বাধা দিয়েন না। এই টাকা ফেরত আনতে না পারলে তো কোনো লাভ নেই।’
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এটি তার চতুর্থ বাজেট পেশ। আর বাংলাদেশের জন্য ৫১তম।বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। বাজেটে করের বিনিময়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা গেলে করের বিনিময়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে না।
তিনি বলেন, আমেরিকাসহ ১৭টি দেশ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে টাকা ফেরত নিয়ে এসেছে। আমরাও সেই কাজটি করতে যাচ্ছি।মুস্তফা কামাল এ সময় কেন টাকা পাচার হয় তার কারণও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘টাকার একটি ধর্ম আছে। টাকা যেখানে সুখ আর বিলাসিতা পায় এবং যেখানে রিটার্ন বেশি, সেখানেই চলে যায়। টাকা কিন্তু এখন কেউ সুটকেসে করে পাচার করে না। সহজেই ডিজিটাল সিস্টেমে টুলস ব্যবহার করে পাচার করে। টাকা পাচার আসলে বিভিন্ন কারণে হয়ে যায়। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া সেগুলো বলা যায় না। পাচার নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। সেগুলোর সত্যতা পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিই। এখনো যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এমনকি তাদের অনেকেই জেলে আছেন।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মিডিয়াতে পাচার নিয়ে একটি রিপোর্ট হলেই তাকে ধরে ফেলা যায় না বা আমরা বিচার কাজ হাতে নিতে পারি না। আমাদের নিজস্ব সিস্টেম আছে। আমরা জানি, সুইজারল্যান্ডে টাকা আছে। কিন্তু সেটা বললেই তো আর বিচার কাজ শুরু করে দিতে পারি না। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়েই কাজ করতে হয়। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমেই আমাদের অ্যাকশনে যেতে হয়।’
টাকা পাচার বন্ধে করণীয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী ধর্মীয় বিধানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের সবসময় ধর্মের কাছেই ফিরে আসতে হবে। ধর্মের কথা শুনে যদি মানুষ একটু নরম হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) স্পষ্ট করে বলেছেন, যে ঘুস দেয় আর যে নেয়- দুজনের জায়গাই জাহান্নামে। আমরা জাহান্নামে যাওয়ার কাজ না করি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।