রোববার (৩ জুলাই) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে নিরাপদ ও টেকসই পোলট্রি উৎপাদন: প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা শীর্ষক নীতিনির্ধারণী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়ার্ল্ড'স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
এসময় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, পোলট্রি খাতের উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যত প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দেওয়া দরকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সেটা করবে।
তিনি আরও বলেন, পোলট্রি খাতের যে কোনো সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে। পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট নীতিমালা আধুনিক ও সময়োপযোগী করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। করোনার সময় পোলট্রি খাতে উদ্ভূত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ প্রাণিসম্পদ খাত নুয়ে পড়লে দেশে আমিষের সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণে প্রাণিসম্পদ খাত রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
পোলট্রির উন্নয়নে ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের এসময় আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, পোলট্রি ফিড তৈরির জন্য যে প্রোটিন বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় তার ওপর কর নেওয়া হয় না। সরকার পোলট্রি খাদ্যের দাম কমানোর জন্য কর রেয়াত দিয়েছে। অথচ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তার উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত উপকরণ আমদানি করে গুদামজাত করেছে, বিক্রিও করেছে। এজন্য প্রোটিন আমদানির অনুমতি কাদের কতটুকু দেওয়া হয়েছে সরকার সে তথ্য সংগ্রহ করছে। কার উৎপাদন সক্ষমতা কতটা আছে এবং তিনি কতটুকু কাঁচামাল বাইরে থেকে এনে কতটুকু ব্যবহার করেছেন ও বাকিটা কী করেছেন সেটি জানতে চাওয়া হবে। সরকার পোলট্রি খাতে সহায়তা করতে চায়, তবে সেটা যথাযথভাবে সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, কৃষিতে যেসব বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় সেখানে মূল্যহার একরকম, প্রাণিসম্পদের পোল্ট্রি অংশে মূল্যহার ভিন্ন হতে পারে না। এটি একই হারে হতে হবে। মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি খাত বৃহত্তর কৃষির অংশ। কৃষি খাত বিদ্যুতের যে সুযোগ পায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সে সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। নতুন একটি খাতকে বিকশিত করার জন্য যে সুযোগ করে দেওয়া দরকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে শিগগিরই সে সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে।
পোল্ট্রি খাদ্যের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কেন এ প্রশ্ন রেখে এ খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, এ খাতে বিদেশ নির্ভরতা কমাতে হবে। দেশে ফিড ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে মেশিনারিজ আমদানিতে সরকার কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য সুবিধা দেবে। পোলট্রি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে এর সহায়ক খাতও বিকশিত করতে হবে। রাষ্ট্র সব সহায়তা দেবে।
তিনি আরও যোগ করেন, পোলট্রি শিল্পে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। খামারে দূষণ হলে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এ জায়গায় দায়িত্বশীলতা থাকতে হবে। যাদের বড় খামার আছে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে ভোক্তারা পোলট্রি থেকে উৎপাদিত খাদ্যের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
পোলট্রি থেকে উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য শিল্প স্থাপনের ওপর এ সময় গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। এ ধরনের শিল্প স্থাপনে রাষ্ট্র সবধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দিতেচায় বলে জানান মন্ত্রী।
ওয়ার্ল্ড'স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং পোলট্রি খাতের বিজ্ঞানী, গবেষক ও অংশজীনরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় ওয়ার্ল্ড'স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ আয়োজিত নিরাপদ ও টেকসই পোলট্রি উৎপাদন বিষয়ক সেমিনারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সেমিনারের টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং নিরাপদ ও টেকসই পোলট্রি উৎপাদন: প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা বিষয়ে উপস্থাপন করেন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর সভাপতি শামসুল আরেফীন খালেদ।