শনিবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে। তখন দেশে জ্বালানির তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আমাদের হতবাক করেছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে নিঃসন্দেহে চাপে পড়বে রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। বিশেষ করে ডিজেলের দাম ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রতিলিটার ১১৪ টাকা (অর্থাৎ প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা বৃদ্ধি) করার সিদ্ধান্তের কারণে এর প্রভাব সরাসরি বিদ্যুৎ, পরিবহন তথা অন্যান্য উপখাতগুলোতে পড়বে। যা প্রকারান্তরের নিট বা পোশাকখাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে হ্রাস করে দেবে।
‘এতে দেশের নিট পোশাকশিল্প উদ্যোক্তাদের রপ্তানি প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসে বিকল্প পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি বলে মনে করছে বিকেএমইএ।’
সেলিম ওসমান বলেন, দীর্ঘ দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় এক ধরনের দীর্ঘ শ্লথ প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে, যা থেকে আমরা এখনো বেরোতে পারিনি। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে সারাবিশ্বের অর্থনীতি। ফলে পুরো বিশ্বের কাঁচামাল সরবরাহ চেইনে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি নিট সেক্টরসহ দেশের পোশাক শিল্পের ওপর পড়েছে। এ শিল্পখাতটি মূলত পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও শ্রমিক- এই চারটি দেশীয় উপাদানকে মূল সরবরাহ চেইনে ধরে বাকি সব কাঁচামাল বহির্বিশ্ব থেকে আমদানি করে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এ দেশীয় উপাদানগুলো প্রাপ্তিতে কোনো ধরনের চাপ তৈরি হলে পুরো সেক্টরটিই চাপে পড়ে যায়।
তিনি বলেন, এমনিতেই বিগত কিছু সময় ধরে আমরা কারখানাতে গ্যাসের প্রবাহ বা প্রেসার ঠিকমতো পাচ্ছি না, যা আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। তার ওপর ২০২২-২৩ সালের অনুমোদিত বাজেটে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে এক শতাংশ করায় শিল্প উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে চাপে পড়ে গেছে। এতো কিছুর পরেও গত বছর একদফা বিদ্যুৎ এর মূল্যবৃদ্ধি এবং মাত্র কিছুদিন পূর্বেই গ্যাস এর মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার এবং উক্ত সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের ব্যাপক চাপে ফেলবে জেনেও দেশের স্বার্থে আমরা বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এটিকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপরই একটি মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে। ফলে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, এ পরিস্থিতিতে নিট শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশকে ধরে রাখতে ও গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি জনিত কারণে যে অর্থনৈতিক বোঝা এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের ওপর পড়েছে, তা সমাধানে জরুরিভাবে আপাতকালীনের জন্য নগদ সহায়তার হার বৃদ্ধির অনুরোধ জানাচ্ছি।